পর্তুগালে নাগরিকত্বের শর্তে আসছে কড়াকড়ি, নতুন বিল প্রস্তাব

প্রতীকী ছবি। ছবিতে পর্তুগালের ফ্ল্যাগ ও পাসপোর্ট।
প্রতীকী ছবি। ছবিতে পর্তুগালের ফ্ল্যাগ ও পাসপোর্ট।

ইউরোপের দেশগুলোতে দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠছে অভিবাসনের নিয়ম-কানুন; বিশেষকরে যারা স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী কিংবা নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাদেরকে এখন মুখোমুখি হতে হবে কঠিনসব চ্যালেঞ্জের। জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের পর পর্তুগালে চলতি মাসে এমন একটি বিলের প্রস্তাব করা হয়েছে যেটি অনুমোদন পেলে পর্তুগিজ জাতীয়তা এবং পাসপোর্ট পাওয়ার নিয়মগুলো আরও কঠোর হবে।

পর্তুগিজ দলের ওই প্রস্তাবটিতে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, নাগরিক হওয়া কেবল একটি আইনি পদক্ষেপ নয়, বরং আরও গভীর কিছু- সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি সংযোগ। এতে বলা হয়েছে যে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব কেবল পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া নয়, বরং একীভূতকরণের একটি প্রকৃত প্রক্রিয়ায় আনা উচিত।

ওই খসড়া বিলে যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে:

অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য কঠোর আবাসন: বর্তমান আইন অনুযায়ী, পর্তুগালে বিদেশি বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশু খুব অল্প সময়ের (বর্তমানে প্রায় ১-২ বছর) বৈধ বসবাসের পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। প্রস্তাবিত বিলে পর্তুগিজভাষী দেশ থেকে আসা বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে এই সময়কাল কমপক্ষে ৬ বছর এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১০ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘ আবাসন: একইভাবে নাগরিকত্বের জন্য আগ্রহী বিদেশি প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের জাতীয়তার উপর নির্ভর করে ৬-১০ বছর বৈধভাবে বসবাস করতে হবে, যা আগে ছিল ৫ বছর।

এছাড়াও আবেদনকারীদের বেশ কিছু নতুন মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে, পর্যাপ্ত পর্তুগিজ ভাষা দক্ষতা প্রদর্শন এবং একটি নতুন “জাতীয় একীকরণ এবং নাগরিকত্ব পরীক্ষা” পাস করতে হবে। “জাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে কার্যকর সংযোগ” প্রমাণ করতে হবে, যার মধ্যে আর্থিকভাবে নিজেদের ভরণপোষণ করতে সক্ষম হওয়ার বিষয় রয়েছে।

নাগরিকত্ব পরীক্ষা: প্রস্তাবে পর্তুগিজ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর একটি আনুষ্ঠানিক নাগরিকত্ব পরীক্ষা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এই পরীক্ষাটি বহুনির্বাচনী হবে এবং পর্তুগালের ইতিহাস এবং মৌলিক প্রতিষ্ঠানের মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করবে।

নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী যে কোনও ব্যক্তির জন্য এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া (এবং মৌলিক ভাষা দক্ষতা থাকা) বাধ্যতামূলক হবে।

ছবিতে পর্তুগালের লিসবনের বেলেম টাওয়ার।

নাগরিকত্ব হারানোর সম্ভাবনা: বিলটিতে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে পর্তুগিজ নাগরিকদের কাছ থেকে জাতীয়তা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়ার একটি ধারা পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গুরুতর অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে (যেমন, ৩ বছরের বেশি কার্যকর কারাদণ্ড, সন্ত্রাসবাদ, বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ) অথবা কেউ যদি জাতিগত ঘৃণা বা অবমাননা প্রচার করে তবে প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত পর্তুগিজ নাগরিকরাও তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারে।

এর অর্থ হল যে কেউ পর্তুগালের জাতীয় প্রতীক বা জননিরাপত্তাকে আক্রমণ করলে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হতে পারে।

মূলত এই পরিবর্তনগুলো স্থায়ীভাবে বসবাসের অপেক্ষায় থাকা বিদেশিদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করবে এবং হাজার হাজার প্রবাসী, দীর্ঘমেয়াদী বাসিন্দা এবং বিদেশি নাগরিকদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

উদাহরণস্বরূপ, অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া একটি শিশু আগের মতো ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্তুগিজ হয়ে উঠবে না। বরং নতুন বিলটি অনুমোদন পেলে তার বাবা-মাকে ৬ বা ১০ বছর ধরে পর্তুগালে বৈধভাবে বসবাসের প্রমাণ দিতে হবে।

একইভাবে, যারা স্বাভাবিক পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের নতুন নিয়ম অনুসারে কমপক্ষে ছয় বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে। তাছাড়া নাগরিকত্ব পরীক্ষাও তাদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক অভিবাসীদের জন্য বা আনুষ্ঠানিক অক্ষরজ্ঞানহীনদের জন্য।

সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এটি একীকরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন বাধা তৈরি করবে।

বাস্তবিক অর্থে, যদি এই আইনটি পাস হয় তাহলে পর্তুগিজ পাসপোর্টের জন্য বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আবেদনকারীদের (২০২৫) একটি দীর্ঘ এবং আরও কঠিন প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পর্তুগিজ ইতিহাস এবং ভাষার ওপর দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। একই সাথে, জাতীয় আনুগত্যের নতুন নিয়মের লঙ্ঘন না করার জন্য নাগরিকত্বপ্রাপ্ত নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে।

এই প্রস্তাবিত আইন যা এখনও সংসদে যুক্তিতর্কের অপেক্ষায় রয়েছে, তা অনুমোদন পেলে পর্তুগালের অভিবাসন নিয়ম খোলনলচে বদলে নতুন রূপ নেবে।

এ সংক্রান্ত আরও খবর:

আরও পড়ুন