‘ভালো লাগে না’ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের, পদত্যাগের ইঙ্গিত

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ফাইল ছবি
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ফাইল ছবি

দায়িত্ব নেওয়ার ষোল মাসের মাথায় অভাবনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তারও ষোল মাস পর হঠাৎ করেই মুখ খুললেন, বললেন ‘ভালো লাগে না’, চান পদত্যাগ করতে।

ঢাকায় বঙ্গভবন থেকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণে অপমানবোধ করার কথা জানিয়েছেন; সংসদ নির্বাচনের পর পদত্যাগের পরিকল্পনা তার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলে একা হয়ে যান আওয়ামী লীগের পছন্দে নিয়োগ পাওয়া সাহাবুদ্দিন।

বত্রিশ মাসে রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় দিবসে বাণী দিলেও অনুষ্ঠানগুলোতে তার উপস্থিতি ছিল চোখে না পড়ার মতো। তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগও সাংবাদিকদের হয় না।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা স্বীকার করলেও অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয় কিনা, তা প্রকাশ করেননি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তাতে রাষ্ট্রপতির অবস্থানটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনিই ছিলেন একমাত্র সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

সাক্ষাৎকারে সাহাবুদ্দিন বলেন, “আমি চলে যেতে আগ্রহী। বেরিয়ে যেতে আগ্রহী। যতক্ষণ না নির্বাচন হচ্ছে, আমার চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির পদের কারণে আমার অবস্থান বজায় রাখছি।”

রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, মুহাম্মদ ইউনূস প্রায় সাত মাস তার সঙ্গে দেখা করেননি। প্রেস বিভাগকেও তার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো থেকে তার ছবি নামিয়ে ফেলার কথাও জানান তিনি।

সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল, হঠাৎ একরাতে তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জনগণের কাছে ভুল বার্তা যায় যে, হয়তো রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানবোধ করেছি।”

ছবির বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লেখার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করা হয়েছে।”

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের সময় মাঠে থাকলেও সংঘাত দমনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি সেনাবাহিনী, যা আওয়ামী লীগ সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করেছেন, তার ক্ষমতা দখলের কোনো ইচ্ছা নেই।

“বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস রয়েছে। তবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী,” যোগ করেন তিনি।

অভ্যুত্থানের পক্ষের কয়েকটি সংগঠন গত অক্টোবরে সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে তুমুল আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু ‘সাংবিধানিক সংকট’ এড়াতে সরকার তাকে আর সরানোর পথে যায়নি।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কিছু ছাত্র প্রথমে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল তাকে সরে যেতে বলেনি।”

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা– জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে তিনি স্বাধীন, কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন।”

এদিকে, রয়টার্সের সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশের অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, তার আর ‘ভালো লাগছে না’। নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে তিনি হয়ত পদত্যাগ করবেন।

আরও পড়ুন