জুলাই সনদে ‘কফিনের শেষ পেরেক’ দিলেন রাষ্ট্রপতি?

গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই সনদে সই করে রাজনৈতিক দলগুলো।
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই সনদে সই করে রাজনৈতিক দলগুলো।

জুলাই সনদে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরকে ‘কফিনের শেষ পেরেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছিলেন অভ্যুত্থানের তরুণ তুর্কীরা। সেই মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর স্বাক্ষরেই বাস্তবায়নের রূপরেখা পেল ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই আদেশের ভিত্তিতে আগামীতে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট, যেখানে বাংলাদেশের ভোটারযোগ্য নাগরিকরা তাদের সম্মতি বা আপত্তি জানাবেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে, সনদে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কর্মপদ্ধতি ও সময়সূচি নিয়ে দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ওই গণভোটের প্রশ্ন ও সংশ্লিষ্ট চারটি প্রসঙ্গ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

>>> নির্বাচনকালীন সময়ে তত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

>>> আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। 

>>> সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি , বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ জুলাই জাতীয় সনদের যে ৩০টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। 

>>> জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটি মাত্র প্রশ্নে ভোটারেরা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই প্রতিনিধিরা একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। 

পরিষদ অধিবেশন শুরুর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এটি সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। 

এদিকে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আপত্তি জানিয়ে আসছিল জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের একটি অংশ।

এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গত ২ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জুলাই সনদ আদেশ অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেই জারি করতে হবে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এটি হলে বিবেচিত হবে কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে। কারণ এ বিষয়ে তার আইনগত দিক নেই। জনগণ তা মেনে নেবে না।

সরকার আদেশ জারি করলে এবং ধারাগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

পরদিন একই দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীও বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলে তারা তা মেনে নেবেন না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads