স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়।
বিক্ষোভের শুরুতে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি মিছিল বন্ধের চেষ্টা করে। তবে আন্দোলনকারীদের বাঁধার মুখে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি সদর মার্কেট থেকে উপজেলা গেটে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে মুরাদনগর বাজার সংলগ্ন ‘আল্লাহ চত্বরে’ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া পদত্যাগ এবং তার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার, মুরাদনগরের নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা-গ্রেপ্তার, নানান দুর্নীতির অভিযোগ এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহযোগিতা অভিযোগ এনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
এদিন দুপুর ২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সদর মার্কেট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন।
এর আগে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরাসরি মাঠে থেকে কর্মসূচি তদারকি করতে থাকেন মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান। মিছিলের শুরুতে আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নেন ওসি।
পরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যানার ছেড়ে রাস্তার পাশে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ওসিকে। এসময় একজন পুলিশ সদস্য ওসিকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন।
এদিকে মিছিল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। ‘আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ করতে হবে করতে হবে’, ‘ভুয়া’, ‘স্বৈরাচারের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবেন অন্যায়’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত’। বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন— জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কোম্পানিগঞ্জে (কুমিল্লা টু সিলেট মহাসড়ক) নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, মীর আসিফ আব্দুল্লাহ, আহসান আহমেদ ও মো. রাফি।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, “আসিফ মাহমুদের বাবা নিজের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছিলেন। তাছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাছাড়া এনসিপির ব্যানার নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এলাকায় আসছে। এসব অপকর্মে জড়িত আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করছি।”
তারা আরও বলেন, “বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়, গুলি করেছে হত্যা করেছে, ৫ আগস্টের পর দফায় দফায় তাদের সঙ্গে মিটিং করেছে আসিফ মাহমুদের বাবা। যার ভিডিও ছবি আমাদের কাছে আছে। আসিফ মাহমুদের বাবা ও ভাই মুরাদনগরে স্বৈরাচারকে আবারও পুনর্বাসিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”
কর্মসূচিতে নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “আমরা আন্দোলন করেছিলাম বাক স্বাধীনতার জন্য। মুরাদনগরে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না। আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ঢাকাতে আন্দোলন হলেও প্রশাসন কোনো বাঁধা দেয়নি। কিন্তু মুরাদনগরের কেন বাঁধা; আসিফ মাহমুদের উপজেলা বলে?”
“আমাদের আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে কিন্তু আসিফ মাহমুদের মতো কিছু কিছু উপদেষ্টা চেয়ারে বসে দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছে। তারা শুধু ক্ষমা চাইল আর সবকিছু ঠিক হয়ে গেল? তাদের কেনো শাস্তি হলো না? উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা ঠিকাদারির লাইসেন্স নিল পরে বাতিল করেই কি সমাধান হয়ে যায়?” যোগ করেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ ও নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মুরাদনগরের সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।