অর্থায়ন সংকটে যুক্তরাজ্যের এক চতুর্থাংশেরও বেশি সামাজিক হাউজিংয়ের বাড়ি বিক্রি করে দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই সংকট এতোটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, বাজেট সমন্বয় করতে গিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ৩৭ শতাংশ খরচ কমিয়ে আনতে হয়েছে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খাত থেকে।
এক জরিপে নিজস্ব সোশাল হাউজিং পরিচালনা করে এমন ৭৬টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলেন গবেষকরা। এ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি ১০টির মধ্যে নয়টি কাউন্সিল তাদের হিসাবের সমন্বয় করতে হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জরুরি তহবিলে হাত দিতে হতে পারে।
আর ৭১ শতাংশ বলেছে তাদের চলমান আবাসন প্রকল্পগুলো বিলম্বিত বা বাতিল করার আশঙ্কা করছেন তারা।
এছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ কাউন্সিল জানিয়েছে তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়ন করতে পারবে কি না সেবিষয়ে শঙ্কিত।
সাউথ লন্ডনের সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল ৮ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বাড়ি নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করে।
গবেষণা করে দেখা হয় সামাজিক হাউজিং পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যিনি হাউজিং, কমিউনিটিজ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই অ্যাঞ্জেলা রেনার সামনে কতোটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বর্তমান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী রেনার বর্তমান সংসদের পাঁচ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে চান। তার এই বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামাজিক আবাসনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যয় বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া কাউন্সিলের ঘরগুলোতে বসবাসকারীদের কম দামে বাড়ি কেনার অধিকার দেয়া ‘রাইট-টু-বাই’ স্কিম সীমিত করার উপায় নিয়েও আলোচনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত শতকের ৮০ এর দশক থেকে চলা এই স্কিমের ফলে সামাজিক আবাসনের সহজলভ্যতা অনেকাংশে কমে গেছে।
সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল জানায়, এসব পদক্ষেপের পরও জরিপ থেকে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কাউন্সিলের হাউজিং বাজেট ‘বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রান্তে’ রয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে ৬১ শতাংশ কাউন্সিল নতুন কাজ স্থগিত বা পিছিয়ে দিয়েছে, এবং ৬৮ শতাংশ মনে করছে সামাজিক আবাসন নির্মাণ বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি কমাতে হবে। আর ৩৭ শতাংশ মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ কমিয়ে দিয়েছে।
বাজেট সমতা রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে ২৮ শতাংশ কাউন্সিল হাউজিং স্টক বিক্রি করতে চাইছে; অন্যদিকে ৪৫ শতাংশ ইতোমধ্যে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে রিজার্ভ ব্যবহার করছে।
এছাড়া ৭৬টি কাউন্সিলের মধ্যে ৭১টিতে আর্থিক চাপের রয়েছে।
ঘাটতি কমাতে কিছু কাউন্সিল ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যার মধ্যে ১০টি কাউন্সিল মোট সংখ্যার ১৩ শতাংশ বাড়ি বিক্রি করেছে এবং ১১ শতাংশ ঋণ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
সাউথওয়ার্ক কাউন্সিলের লেবার পার্টির নেতা কিয়েরন উইলিয়ামস বলেন, “গৃহসংকট মেটাতে সরকারের ১৫লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ শেষ করা জরুরি। আর কাউন্সিল হাউজিংকে প্রচেষ্টায় মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তবে যথাযথ পদক্ষেপ ছাড়া কাউন্সিল এতো বাড়ি বানাতে এবং পুরনোগুলোকে ভবিষ্যতে বসবাসযোগ্য করতে পারবে না বলেও তিনি জানান।
নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য আনুমানিক এক বিলিয়ন পাউন্ড খরচের অনুমান করা হলেও রেনার ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড তহবিল সংগ্রহ করেছেন।
লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলর এবং আবাসন মুখপাত্র অ্যাডাম হাগ বলেন, “দশকের পর দশক ধরে কাউন্সিল হাউজিং যে অস্থির অবস্থায় রয়েছে, এটাই তার প্রমাণ।”
স্থানীয় সরকার যাতে প্রয়োজনগুলো পূরণ এবং ভাল মানের কাউন্সিল হাউজিং দিতে পারে সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের ১০৯টি কাউন্সিল যৌথভাবে একটি সুপারিশমালা স্বাক্ষর করে। যার লক্ষ্য ছিল ২০১২ সালের হাউজিং রেভিনিউ অ্যাকাউন্টের (এইচআরএ) স্থলে কাউন্সিলের খরচে সামাজিক হাউজিংয়ের আয়-ব্যয় মেটানো, যাকে কাউন্সিলগুলো অসমর্থনীয় বলে মনে করছে।
তবে হাউজিং, কমিউনিটিস এবং লোকাল গভর্নমেন্টের এক মুখপাত্র বলেছেন, ১৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণে তারা কাউন্সিলগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
তারা বলেছেন, “আমরা জানি যে স্থানীয় সরকার অনেক বছর ধরে স্বল্পমেয়াদী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ কারণেই বাড়ি নির্মাণে তাদের সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।”
এসব পদক্ষেপের মধ্যে রাইট-টু-বাই স্কিম সংস্কার এবং সাশ্রয়ী ঘর নির্মাণ কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড রয়েছে বলে জানান তারা।
এছাড়া শিগগির আরও পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে