লিসবনের মার্তিম মনিজে পুলিশের অভিযানকে ‘অবৈধ বল প্রয়োগ’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করছেন বাংলাদেশিদের একজন স্থানীয় নেতা, যিনি ৩৫ বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন।
তার অভিযোগ, কোনো অপরাধ সনাক্ত ছাড়াই এ ধরনের অভিযান স্থানীয়দের মনে অভিবাসীদের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব তৈরি করবে।
তসলিম উদ্দিন রানা নামে ওই কমিউনিটি নেতা বলেন, “অভিবাসীদের দেয়ালের মধ্যে হেলান দিয়ে যেভাবে হাত তুলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল তাতে মনে হয়েছে তারা কোনো দাগি অপরাধী।
“নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের অভিযান দৃশ্যত বর্ণবাদকে উসকে দেবে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের অভিবাসীদের বিরুদ্ধে! আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারত থেকে আসা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে।”
তসলিম যে দীর্ঘ সময় ধরে পর্তুগালে বাস করছেন, তার নিজের দেশে কাটানো সময়ের তা কয়েকগুণ।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই বাংলাদেশি অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকা ঘিরে ফেলে পর্তুগালের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এলাকাটিতে ঢোকার ও বের হওয়ার সড়ক বন্ধ করে দিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সাঁজোয়া যান নিয়ে শুরু করে অভিযান।
অস্ত্র ও মাদক রয়েছে এমন ‘সুর্নির্দিষ্ট’ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালানোর কথা পুলিশ জানালেও তেমন কিছুই তারা উদ্ধার করতে পারেননি।
হঠাৎ করে এমন অভিযানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। তল্লাশি করা হয় পথচারি ও বিভিন্ন কাজে থাকা ওই এলাকার বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের।
মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে অভিযানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় নাগরিকরাও।
ওই দিন ‘অপরাধীর মতো’ দাঁড় করিয়ে রাখা সবাইকে বৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিহিত করে তসলিম বলেন, “পর্তুগালের সাধারণ নাগরিকদের মতোই তারা কেউ বের হয়েছিলেন প্রতিদিনের বাজার করার জন্য, কেউ চা-কফি খেতে।”
পুলিশের এ অভিযান অভিবাসীদের নিয়ে স্থানীয় নাগরিকদের মনে একটি বাজে ধারণা তৈরি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
“এটা কোনোভাবেই মাফিয়া চক্র বা অপারাধিকে সন্ধানের পন্থা হতে পারে না। পুরো অভিযানে আমাদের কমিউনিটির একজনকেও পাওয়া যায়নি যার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধের প্রমাণ রয়েছে।”
বৃহস্পতিবারের ওই অভিযানের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন সান্তা মারিয়া মায়োর প্যারিস কাউন্সিলের সভাপতি মিগুয়েল কোয়েলহো, যিনি আন্তঃ প্রশাসন মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন।
“পর্তুগালের একজন নাগরিক এবং একজন মেয়র হিসাবে আমি বলবো যা হয়েছে তা ইসলামিক বা লাতিন আমেরিকার স্বৈরাচারের দ্বারাই সম্ভব। তাদেরকে বলতে হবে কেন সড়ক বন্ধ করে এভাবে মানুষগুলোকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। এ ঘটনার পর আন্তঃ প্রশাসনের মন্ত্রী দায়িত্বে থাকার এখতিয়ার হারিয়েছেন।
ইদানিং অভিবাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা একটি ‘ফ্যাশন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“অথচ এই মানুষগুলোই আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছিয়ে দেয়; তাদের আহরিত ফল আমরা প্রতিদিন খাচ্ছি; এই মানুষগুলোর জন্যই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর এতো অগ্রগতি; তারা শান্তিপ্রিয়, তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার প্রমাণ নেই।”
এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন পর্তুগাল পার্লামেন্টের সদস্য মারিয়ানা মারতাগোয়াও।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এখানে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায়। পর্তুগালে যারা বৈধবাবে বসবাস করছেন তাদের সম্মানের চোখে দেখা উচিত, যেমনটা অনেক পর্তুগিজও বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে থাকছেন।
বর্তমান সরকার কট্টর ডানপন্থিদের খুশি করতেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মারিয়ানা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। এরকম আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”