রবি ঠাকুরের চীনে, শতবর্ষ পরে

ROBI

চীনের বসন্তে সেই সফরের মধ্যেই পঁচিশে বৈশাখ এসেছিল। চীনেই পালিত হয়েছিল কবির তেষট্টিতম জন্মদিন। জন্মদিনে অনুরাগীরা চীনা ভাষায় তার নতুন নাম দিয়েছিলেন। সেই নাম ছিল ‘চু চেন-তাং’। চীনা ভাষায় চু-এর অর্থ চীন। আর চেন-তাংয়ের অর্থ ভারত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যেই এক সঙ্গে চীন ও ভারতকে খুঁজে পেয়েছিলেন চীনের দার্শনিক, চিন্তাবিদরা। এখনও তাদের মননে অম্লান রবীন্দ্রনাথ।

লিখেছেন- ভারতীয় সাংবাদিক প্রেমাংশু চৌধুরী

চীন রওনা হবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২৪-এর ২০ মার্চ। গুরুদেবকে বিদায় জানাতে সবাই হাজির। রবীন্দ্রনাথ প্রথম গাইলেন, ‘কণ্ঠে নিলেম গান, আমার শেষ পারানির কড়ি’।

চীনের ক্যালেন্ডারে মাত্র চারটি ঋতু। বছরের শুরু বসন্তের আমন্ত্রণে। তার পর একে একে আসে গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত।

রবীন্দ্রনাথ চীনে পৌঁছলেন ১২ এপ্রিল। তখন চিনে বসন্ত। নতুন বছর শুরু হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনেও নতুন বছর শুরু হতে চলেছে। কয়েক দিন পরেই যে তার জন্মদিন। তেষট্টিতে পা দিতে চলেছেন। সে বারের জন্মদিন কাটল চিনের বসন্তে।

তার পর একশো এক বছর কেটে গেছে। রবীন্দ্রনাথের সেই প্রথম চীন সফরের মতোই চিনে এখন বসন্ত। হালকা ঠান্ডা। মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। প্রায়ই মেঘলা আকাশ।

ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের পঁচাত্তর বছর উদ্‌যাপন চলছে। সেই উপলক্ষেই চীন সরকারের আমন্ত্রণে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীনে আসা। সফর তালিকায় চীনের দু’টি প্রদেশ— হুনান ও ফুজিয়ান। চীনের রাজনৈতিক ইতিহাসে দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। হুনান— ‘চীনের চেয়ারম্যান’ মাও জে দং-এর জন্মভূমি। আর ফুজিয়ান—চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কর্মভূমি। এখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উত্থানের শুরু।

মাওয়ের জন্মভূমি থেকে শি-এর কর্মভূমির যাত্রাপথে এক শতক পরেও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পৃথিবীবিখ্যাত সন্তান জড়িয়ে থাকবেন, কে জানত!

হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা শহর। গাড়িতে ঘণ্টাখানেক দূরে শাওশান। মাও জে দংয়ের জন্মভূমি। কৃষক পরিবারের সন্তান মাও আঠারো বছর বয়সে চাংশায় চলে এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। চাংশা তখন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রী বিপ্লবের পৃষ্ঠভূমি। সেই বিপ্লবের নেতা সান-ইয়াৎ সেনের অনুগামী হয়ে উঠলেন মাও। এই সান-ইয়াৎ সেন রবীন্দ্রনাথকে চিনে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছিলেন, “আমি চাইব নিজে উপস্থিত হয়ে আপনাকে চিনে স্বাগত জানাতে।”

কবিগুরু চীনের মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছিলেন

একশো এক বছর পরে চাংশা শহরে ভারতীয় সাংবাদিকদের স্বাগত জানালেন রবীন্দ্র-অনুরাগী ইয়াং ওয়েইমিং। তার একটি বাঙালি নামও রয়েছে, স্বর্ণা। কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করে প্রাচ্য সাহিত্যে ডক্টরেট করেছেন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ চীন সফরে বক্তৃতা করেছিলেন। তা নিয়ে খুব গর্ব স্বর্ণার। এখন বেজিংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগের সাংবাদিক। ঝরঝরে মিষ্টি বাংলা তো বলেনই। গলা খুলে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গেয়ে ওঠেন। স্কুলের বইতে প্রথম বার রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার পরই মনস্থির করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে বাংলা শিখতে হবে। রবীন্দ্রনাথের টানে কলকাতার জোড়াসাঁকো থেকে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীও ঘুরে এসেছেন। কলেজ স্ট্রিটের কফিহাউসে বসে আড্ডাও দিয়েছেন। এখন চিনা ভাষায় নিয়মিত রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুবাদ করছেন। স্বর্ণা বলছিলেন, “আমার সৌভাগ্য যে, আমি রবিঠাকুরের নিজের ভাষায়, অর্থাৎ মিষ্টি বাংলা ভাষায়, তাঁর সাহিত্যের রূপ-রস-গন্ধ আমার অনুভবের তারে তারে মেখে নিতে পারছি।”

রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম বার চীনে এলেন, তার মাত্র তিন বছর আগে, ১৯২১-এ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। হুনানের রাজধানী তখন মাও জে দংয়ের রাজনৈতিক আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। কমিউনিস্ট শাসনের সুদৃঢ় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ চলছে।

আর আজ?

আজকের চাংশা শহরের বিমানবন্দরে নামলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। শহরের বুক চিরে ছুটছে বুলেট ট্রেন। তার গতি ঘণ্টায় তিনশো কিলোমিটারের বেশি। চাংশা সাউথ রেল স্টেশনে বোধহয় খান তিনেক কলকাতা বিমানবন্দর ঢুকে যাবে। রেলস্টেশনের বিশাল প্রতীক্ষালয়ে যাত্রীদের সংখ্যা দেখলে মনে হবে, তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাইয়ের জনসভা চলছে। শিয়াং নদীর পারে আকাশছোঁয়া অট্টালিকাগুলোর গায়ে সারা সন্ধ্যা জুড়ে নিয়ন আলোর খেলা চলে। এক দিকে হুনান মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। অন্য দিকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানার সারি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির গবেষণাগার, তথ্যপ্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র। মাওয়ের চরমপন্থী সমাজতন্ত্র নয়। তাঁর যৌবনের চাংশা এখন আর্থিক সংস্কারের পথে উন্নয়নের প্রতীক।

মধ্য চীনের এই হুনান প্রদেশের মধ্য দিয়েই গিয়েছে চীনের পরিকল্পিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ বা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্প। প্রাচীন সিল্ক রোড বা রেশম পথের পায়ে পায়ে নতুন বাণিজ্যপথের পুনর্নির্মাণ। চীন, ইরান, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যকে একত্রিত করার চেষ্টা। ভারত অবশ্য এই প্রকল্পে যোগ দেয়নি। কারণ, প্রস্তাবিত এই বাণিজ্যপথ পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাবে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, চীনের এই প্রকল্প ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত।

চাংশা শহরের মাঝে শিয়াং নদীর পারে এসে দাঁড়ালে চোখ চলে যাবে ঠিক নদীর মাঝে কমলা দ্বীপে। অরেঞ্জ আইল্যান্ড। ছোট্ট দ্বীপের মাঝে মাও জে দংয়ের একশো ফুটের বেশি উঁচু আবক্ষ মূর্তি। আটশো টন গ্র্যানাইট পাথরে তৈরি এই মূর্তিকে দেখে মাও জে দং বলে চেনা শক্ত। মাও এখানে তরুণ। চুলে ঢেউ খেলছে। দেখলে মনে হয়, কোনও কমবয়সি কবি। চুলের ভাব অনেকটা রবীন্দ্রনাথেরই কমবয়সের ছবির মতো। মাও জে দং অবশ্য সত্যিই কবিতা লিখতেন। তার রাজনৈতিক আঁতুড়ঘর চাংশাকে উৎসর্গ করা কবিতায় লিখেছিলেন, “শরতের শীতে আমি একা দাঁড়িয়ে কমলা দ্বীপের চূড়ায়, শিয়াং নদী উত্তরের দিকে বয়ে যায়।”

বত্রিশ বছর বয়সে লেখা মাওয়ের এই কবিতাকে স্মরণ করেই অরেঞ্জ আইল্যান্ডে মাওয়ের আবক্ষ মূর্তির উচ্চতা ৩২ মিটার বা ১০৫ ফুট। শিয়াং নদীর পারে চাংশা স্কোয়ার থেকে সেই আলোকিত মূর্তি দেখা যায়। সেখানে তরুণ-তরুণীদের ভিড়। তারা টিক-টক ভিডিয়ো তৈরিতে মগ্ন। চিনের এই নতুন প্রজন্ম কি মাও জে দংয়ের মতাদর্শ বুঝতে পারে? না কি তাঁরা শুধু শি জিনপিংকেই চেনে?

নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রথম এমন প্রধানমন্ত্রী, যার জন্ম ১৯৪৭ সালের দেশের স্বাধীনতার পরে। ঠিক তেমনই শি জিনপিং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক, যার জন্ম ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের প্রতিষ্ঠার পরে।

চীনের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০১২ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ ন্যাশনাল কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদকের পদে শি জিনপিংয়ের উত্থান। পরের বছর তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট। মাওয়ের চরমপন্থী সমাজতন্ত্র নয়, বরঞ্চ দেং জিয়াওপিংয়ের সংস্কারের পথেই হেঁটেছেন শি জিনপিং। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, দেশের ক্ষমতায় বসে শি জিনপিং সব থেকে বেশি নজর দিয়েছিলেন মাও জে দংয়ের জন্মভূমি হুনানের উন্নয়নে। এই হুনানের শিবাডং গ্রাম শি জিনপিংয়ের ‘লক্ষ্য বেঁধে দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প’-এরপ্রথম পরীক্ষাগার।

এখন শিবাডং গ্রামে পা রাখলে মনে হবে কোনও পর্যটনকেন্দ্র। বাস্তবেও তাই। মিয়াও জনজাতির বাস জলরঙে আঁকা ছবির মতো এই গ্রামে। কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা উত্তরবঙ্গ বা সিকিমের ছোট্ট বসতির মতো। হুয়াইউয়ান কাউন্টির উলিং পর্বতের কোলে মখমলের মতো সবুজ উপত্যকা। মেঘ ভেসে এসে চোখের পাতায় চুমু খেয়ে যায়। গ্রামের আশপাশে চুনাপাথরের পাহাড়ে আঠারোটি গুহা। তা থেকেই গ্রামের নাম শিবাডং। চিনা ভাষায় যার অর্থ ‘আঠারো গুহা’।

দশ-বারো বছর আগে শিবাডংয়ের এই চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ছাড়া আর কিছুই ছিল না। চাষের অযোগ্য জমি। গ্রামের ৫৭ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র। পানীয় জলের জোগান নেই। গ্রামের ছেলেমেয়েরা শহরে চলে যেত চাকরির খোঁজে। গ্রাম থেকে বেরিয়ে বাস ধরার জন্য পাকা রাস্তায় পৌঁছতে এক ঘণ্টা মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে হত। গ্রামে যেটুকু শাকসব্জি হত, তা বিক্রি করতে কাছের বাজারে যেতে দু’ঘণ্টা সময় লাগত।

শিবাডং গ্রামের ‘বড়দিদি’ বলে সবাই এক ডাকে চেনে সত্তর বছরের শি পাসুয়ানকে। মাথার পাগড়ির মতো টুপি। সারা দিন বাড়ির দালানে চেয়ারে বসে আছেন। গ্রামের ভাল-মন্দের দিকে কড়া নজর। বেশ মনে করতে পারেন, বছর বারো আগে নভেম্বরে গ্রামে এক জন অতিথি এসেছিলেন। তাকে নিয়ে বেজায় হইচই। পাসুয়ান তাকে চিনতেই পারেননি। বুঝতেই পারেননি, তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। কী করে দেখবেন! আগে কখনও দেখেননি। বাড়িতে তখনও টিভি ছিল না। সে প্রসঙ্গ উঠলে এখনও ফিকফিক করে হাসেন পাসুয়ান।

জিনপিং শিবাডং-এর বড়দিদির হাত ধরে গল্পগাছা করে ফিরে গিয়েছিলেন। তার পর শিবাডংয়ের দোরগোড়ায় সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা এনে হাজির করেছিলেন। প্রথম কাজটি ছিল, গ্রামে কতখানি দারিদ্র রয়েছে, তা চিহ্নিত করা। সেই অনুযায়ী গ্রামের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হল। মৌমাছি পালন, পাহাড়ি জমিতে ধাপ কেটে কেটে নানা রকম চাষ, হোম-স্টে থেকে মিয়াও জনজাতির বিখ্যাত এমব্রয়ডারির উপরে জোর দেওয়া হল। ই-কমার্সের মাধ্যমে শিবাডংয়ের মধু থেকে এমব্রয়ডারি ছড়িয়ে পড়ল গোটা চীনে। গ্রামীণ পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হল শিবাডং গ্রামকে। দশ বছরে গ্রামের মাথাপিছু আয় ১২ গুণ বেড়ে গেল। এখন শিবাডং গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয় বছরে প্রায় পৌনে তিন হাজার ডলার। আড়াই লক্ষ টাকার বেশি।

বসন্তের মরসুমে শিবাডংয়ে রোজ কোনও না কোনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভিড়। বাসে চেপে সবাই বেড়াতে আসে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমান। শিবাডং গ্রামের মেয়ে ইয়ুন গাইড হিসেবে কাজ করেন। গ্রামে বেড়াতে এলে সবাই পাসুয়ানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে ছবি তোলেন। পিছনের দেওয়ালে টাঙানো পাসুয়ানের হাত ধরে বসে থাকা শি জিনপিংয়ের ছবি।

শিবাডং গ্রামের উন্নয়ন দেখে ফেরার সময় রবীন্দ্র-অনুরাগী ইয়াং ওয়েইমিং ওরফে স্বর্ণা বলছিলেন, “দেখুন, চীনে শুধু যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের প্রভাব রয়েছে, তা কিন্তু নয়। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা নিয়ে ভাবনা, সামাজিক চিন্তাধারা এবং শিবাডংয়ের মতো গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের ভাবনাও চীনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এখনও চিনে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। তার এ সব নিয়ে লেখালিখি চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে।”

মধ্য চীনে হুনানের রাজধানী চাংশা থেকে চিনের দক্ষিণ-পূর্বে ফুজিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুঝৌ শহরের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ন’শো কিলোমিটার। তবে বুলেট ট্রেনে চেপে এই দূরত্ব পেরোতে সময় লাগে মাত্র চার ঘণ্টা। কারণ ঘণ্টায় তিনশো কিলোমিটার বেগে এই বুলেট ট্রেন ছোটে। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, রাজধানী এক্সপ্রেস খুব বেশি হলে ১৪০ কিলোমিটার বেগে ছোটে। আর বন্দে ভারতের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যদিও দুই ট্রেনেরই গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের কম। কারণ বন্দে ভারত বা রাজধানী এক্সপ্রেস, দুই ট্রেনই অন্যান্য ট্রেনের সঙ্গে একই লাইনে ছুটছে।

চীনে নদী, পাহাড়ের উপরে রেল-সেতু তৈরি করে, একের পর এক সুড়ঙ্গ কেটে শুধুমাত্র বুলেট ট্রেনের জন্য আলাদা রেললাইন তৈরি হয়েছে। যতটা সম্ভব সরলরেখায় পাতা হয়েছে বুলেট ট্রেনের রেললাইন। যাতে বাঁক ঘোরার জন্য ট্রেনের গতি কমাতে না হয়। বুলেট ট্রেনের ভিতরে বসে বোঝার উপায় নেই সে তিনশো কিলোমিটার বেগে ছুটছে। কোনও ঝাঁকুনি নেই। জানলার পাশে গরম চায়ের কাপ রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। চা চলকে পড়বে না। ট্রেনের ঘটাং ঘটাং শব্দের বালাই নেই। শুধু মাঝে মাঝে কান বন্ধ হয়ে যাবে। যেমনটা এরোপ্লেনে চাপলে হয়। স্টেশনে ট্রেন ঢোকার দশ-পনেরো মিনিট আগে পর্যন্ত আপনি প্ল্যাটফর্মে যেতে পারবেন না। স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ে অপেক্ষা করতে হবে। প্ল্যাটফর্মে শুয়ে-বসে অপেক্ষা করার নিয়ম নেই। রেললাইনে আবর্জনা ছুড়ে ফেলার সম্ভাবনাতেও দাঁড়ি। আমদাবাদ থেকে মুম্বই পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘হাই-স্পিড রেল করিডর’ তৈরির পরে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন চালু হলে হয়তো এ দেশেও এমন দৃশ্য দেখা যাবে। চীন অবশ্য এখনই ৪৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি ‘হাই-স্পিড রেল করিডর’ তৈরি করে ফেলেছে। রোজ শ’য়ে শ’য়ে বুলেট ট্রেন ছুটছে সেই রেলপথে।

মাও জে দংয়ের জন্মভূমি হুনান থেকে বুলেট ট্রেনে চেপে শি জিনপিংয়ের কর্মভূমি ফুজিয়ান শহরে এসে বৃষ্টি আরও বাড়ল। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ৈর এক তরুণ অফিসার হেসে বলছিলেন, “ফুজিয়ানের মানুষের বিশ্বাস করে, বৃষ্টি হল সৌভাগ্যের লক্ষণ। ভারতের সাংবাদিকরা সৌভাগ্য নিয়ে এলেন।”

ফুজিয়ানের উলং চায়ের সুখ্যাতি দুনিয়া জুড়ে। সেই সঙ্গে চা-চক্রের জনপ্রিয়তাও কম নয়। অতিথিকে এখানে টেবিলে বসিয়ে তার সামনেই যত্ন করে চা তৈরি করে পেয়ালায় ঢেলে দেওয়া হয়। আড্ডা জমে। পেয়ালা শেষ হলে আবার চা ঢেলে দেওয়া হয়। পেয়ালা খালি ফেলে রাখা প্রথাবিরুদ্ধ।

রবীন্দ্রনাথও চীনে এসে এই চা-চক্রের প্রেমে পড়েছিলেন। তাই শান্তিনিকেতনে ফিরে চালু করেছিলেন, ‘শু চ্রী মো চা-চক্র’। চিনের কবি-অধ্যাপক শু চী ম্রো রবীন্দ্রনাথের দোভাষীর কাজ করেছিলেন। বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে দেরি হয়নি। চীনা বন্ধুর নামাঙ্কিত চা-চক্রের জন্য একটি গানও লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ— ‘হায় হায় হায় দিন চলি যায়, চা-স্পৃহ চঞ্চল চাতকদল চল চল চল হে, টগবগ-উচ্ছল কাথলিতল-জল কল কল হে, এল চীনগগন হতে পূর্বপবনস্রোতে শ্যামলরসধরপুঞ্জ।’

বছর পঁচিশ আগে এই ফুজিয়ানের গভর্নর ছিলেন শি জিনপিং। ফুঝৌ শহর থেকে ঘণ্টা দেড়েকের রাস্তা নিংদে শহর। আশির দশকের শেষে নিংদেতে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন শি জিনপিং। নিংদে শহরের এক দিকে পাহাড়, অন্য দিকে পূর্ব চীন সাগর। নিংদে এলে আপনাকে দেখতেই হবে সমুদ্রের ধারে শিয়াকি গ্রাম। পাহাড় কেটে তৈরি এ গ্রামের রাস্তায়, বাড়ির দেওয়ালে মাছের ছবি। গ্রামের মাঝখানে বড় কাঠের নৌকা সাজানো। কারণ এ গ্রামের বাসিন্দারা এক সময় নৌকাতেই, মাছেদের মতো সমুদ্রের মাঝে জীবন কাটাতেন। ডাঙায় তাঁদের বাসস্থান ছিল না।

শিয়াকি গ্রামে এলে আপনাকে হাসিমুখে স্বাগত জানাবেন শহরের মেয়র ও কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী চেং ইউয়ি। নিজের হাতে চায়ের কাপে সুগন্ধী উলং চা ঢেলে দেবেন। তার পর শোনাবেন তার নৌকায় জন্মের কথা। চেংয়ের জন্ম হয়েছিল নৌকাতেই। চেং ও তার ভাই-বোন, বাবা-মা, ঠাকুরদা-ঠাকুমা মিলিয়ে এক সঙ্গে তিন প্রজন্মের বাস ছিল একটিমাত্র নৌকায়। সেখানেই মাছ ধরা, রান্না-খাওয়া, জীবনযাপন। চেং বেশ মনে করতে পারেন, ছোটবেলায় মা তাঁকে নৌকার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন। যাতে ঢেউয়ের ধাক্কায় নৌকা দুললে ছোট্ট মেয়ে জলে পড়ে না যায়। কিন্তু ডাঙায় ফেরার উপায় নেই। কারণ নৌকার বাসিন্দাদের হাতে জমির মালিকানা নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনার কথা নৌকায় জীবন কাটানো বাপ-মায়ের মনে ইচ্ছে হয়েই থেকে যেত।

শি জিনপিং নিংদেতে দলের সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময়ই ঠিক করে নিয়েছিলেন, এই নৌকায় বাস করা মানুষগুলোর জন্য বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে। তাঁদের মাটিতে বসবাসের অধিকার দিতে হবে। ১৯৯৯ থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথমে সাধারণ ইটের বাড়ি। প্রায় তিনশো পরিবার নৌকা ছেড়ে প্রথম বাড়িতে থাকা শুরু করলেন।

বছর ষাটের জিয়াং চেংকাই বেশ মনে করতে পারেন, প্রথম প্রথম পাকা বাড়িতে শুয়ে ঘুম হত না। নৌকার দুলুনিতেই জীবনের প্রথম পঁচিশ-ত্রিশ বছর কেটে গিয়েছে। শি জিনপিং এক বার নিংদে সফরে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জল ছেড়ে ডাঙায় জীবন কাটানোর অভ্যাস হয়েছে কি না! শিয়াকি গ্রামের বাসিন্দাদের এখন প্রত্যেকের তিনতলা বাড়ি। মাশরুম, সি-ফুডের ব্যবসা করে শিয়াকি গ্রামের হাল ফিরে গিয়েছে। শিয়াকি গ্রামের ছেলেরা এখন নিংদে-তে অবস্থিত ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংস্থা সিএটিএল বা কনটেম্পোপারি অ্যামপেরেক্স টেকনোলজি কোম্পানিতে কাজ করেন। চেং ইউয়ি মাঝে মাঝে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে নৌকা-জীবনের কথা ভাবেন। সব যেন গত জন্মের কথা মনে হয়।

প্রথম চীন সফরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কেন যেন তার মনে হচ্ছে তিনি নিজের ঘরে ফিরলেন। ১৯২৪-এর প্রথম চিন সফরে রবীন্দ্রনাথ বসন্তের ঊনপঞ্চাশটি দিন কাটিয়েছিলেন। ১২ এপ্রিল থেকে ৩০ মে। বিদায়বেলায় তাঁর দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত জনৈক ব্যক্তি কবির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “কিছু ফেলে গেলেন না তো?”

রবীন্দ্রনাথ উত্তরে বলেছিলেন, “আমার একখণ্ড হৃদয় ছাড়া আর কিছু ফেলে যাইনি।”

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় নিংদে থেকে ফুঝৌতে দলের সম্পাদক হিসেবে বদলি হন অধুনা চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেই বিদায়বেলাতেও তিনি দলের নেতাদের বিদায় সংবর্ধনায় রবীন্দ্রনাথকেই স্মরণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের চীন থেকে বিদায়বেলার সেই কথা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, তিনি নিংদে থেকে বিদায় নিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু ফেলে যাচ্ছেন তাঁর এক খণ্ড হৃদয়। ২০১৪ সালে চিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার ভারত সফরে এসেছিলেন শি জিনপিং। তখনও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি।

মাও জে দংয়ের জন্মভূমি হুনান প্রদেশের চাংশার শিল্পোন্নত শহর থেকে প্রাচীন শহর ফেংহুয়াং, জিশৌ শহরের কাছে গভীর গিরিখাতের উপরে তৈরি আশ্চর্য আইঝাই সেতু, শিবা গ্রামের ভোলবদল দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। চাংজিয়াজিয়ে ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্কে খাড়া স্তম্ভের মতো পাহাড়ের গা বেয়ে মাত্র দেড় মিনিটে প্রায় হাজার ফুট উঠে যাওয়া এলিভেটর এবং ৪৫ হাজার কিলোমিটার রেললাইন ধরে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটে চলা বুলেট ট্রেন চীনের অগ্রগতি জানান দেয়। হুনান থেকে শি জিনপিংয়ের কর্মভূমি ফুজিয়ানে নিংদের অত্যাধুনিক শিল্প-কারখানা, শিয়াকির নৌকাবাসী মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাওয়া, শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন বা সরকারি কার্ডিয়ো-ভাসকুলার হাসপাতালের ছবি দেখলে বোঝা যায়, চিন পরিকাঠামোর সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে কতখানি নজর দিচ্ছে।

চীনের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের একটি স্পষ্ট মাপকাঠি হল, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের বিপুল অংশগ্রহণ। সরকারি ক্ষেত্র থেকে বেসরকারি শিল্পে চাকরি হোক, বিমানবন্দর, রেল স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী থেকে বুলেট ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, রেস্তরাঁ-শপিং মলের কর্মী থেকে সংবাদমাধ্যম, শিক্ষাজগৎ— সর্বত্র চীনা নারীরা বিপুল সংখ্যায় দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। চীনের নারীদের ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জন কর্মক্ষেত্রে যুক্ত। ভারতের ক্ষেত্রে এই হার এখনও ৩০ শতাংশের আশেপাশে। রবীন্দ্রনাথ হয়তো আজকের চীনে এলে সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ দেখে খুশি হতেন।

তা বলে কি চীনের মানুষের কোনও দুশ্চিন্তা নেই? হুনান, ফুজিয়ানের শিল্পাঞ্চলে ঢুঁ মারলে বোঝা যায়, আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক-যুদ্ধ নিয়ে শিল্পমহলে চিন্তা রয়েছে। চিনের জনসংখ্যার গড় বয়স বাড়ছে। বুড়িয়ে যাচ্ছে চীনের সমাজ। চিন্তা তা নিয়েও। কর্মসংস্থান, আয় নিয়েও চিন্তা রয়েছে।

এক দিকে চীন আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টক্কর দিচ্ছে। অন্য দিকে হুনানের চাংজিয়াজিয়ে ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্কে পর্যটন টানতে হলিউডের ‘অবতার’ ছবিই প্রচারের অস্ত্র। প্রায় তিন হাজার খাড়া স্তম্ভের মতো বেলেপাথরের পাহাড় এই ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক জুড়ে। এক-একটির উচ্চতা হাজার ফুটের বেশি। পাহাড়ের খাদে মেঘ জমে থাকলে মনে হয় পাহাড়গুলো ভাসছে। হলিউডের পরিচালক জেমস ক্যামেরন চিনে এসে এই ‘ভাসমান পাহাড়’ দেখেই তাঁর ‘অবতার’ ছবিতে প্যান্ডোরা গ্রহের দৃশ্য তৈরি করেছিলেন। ‘অবতার’-এর পর থেকেই চাংজিয়াজিয়ে ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্কে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বহু গুণ বেড়েছে।

এই পাহাড় দেখে বাংলার কোন বিশেষণ প্রথম মনে পড়ে? ইয়াং ওয়েইমিং ওরফে স্বর্ণা দু’হাত তুলে বলেন, ‘আকাশচুম্বী’।

‘আকাশের নীচে’ বা চীনা ভাষায় ‘তিয়ানশিয়া’ চিনের কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। চীনের সমাজের প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী, আকাশের নীচে একটিই জগৎ। একটিই মানবজাতি। চীনের বিশ্বনীতি সেই ‘তিয়ানশিয়া’ মন্ত্র মেনেই চলে। আমেরিকা থেকে পশ্চিমের দুনিয়া মনে করে, চিন আসলে এ কথা বলে গোটা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চায়। চিনের কূটনীতিকরা পাল্টা দাবি করেন, আজকের দিনে ‘তিয়ানশিয়া’-র মূল ধারণা হল মানবসভ্যতার অভিন্ন ভবিষ্যৎ। ঠিক যে ভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’-এর কথা বলে গোটা বিশ্বকে একটিই পরিবার হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু আমেরিকা মনে করে, শি জিনপিং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ ২০৪৯-এ চিনকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছেন, যেখানে চীন গোটা বিশ্ব শাসন করবে। একেই ‘চীনা স্বপ্ন’ হিসেবে বিক্রি করছেন শি। কিন্তু চীনের কূটনীতিকদের দাবি, নরেন্দ্র মোদী যেমন ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষে ‘উন্নত অর্থনীতি’-র লক্ষ্য নিয়েছেন, তেমনই শি জিনপিং গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের শতবর্ষে অত্যাধুনিক, সমৃদ্ধ চিনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। এতে ভুল কোথায়?

শি জিনপিংয়ের চিন মনে করে, ভারতের উচিত চীনকে আমেরিকার চশমায় না দেখে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা। তা হলেই সংঘাত কমবে। পৃথিবীর দুই প্রাচীন সভ্যতা আবার কাছাকাছি আসবে। তাই ভারত-চীন সম্পর্কের পঁচাত্তর বছরে বেজিং নতুন করে দু’দেশের মধ্যে নাগরিকদের যোগাযোগ, আদানপ্রদান বাড়াতে চাইছে।

রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম চীনে গিয়েছিলেন, তখনও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা হয়নি। চীনের সেই উত্তাল সময়ে রবীন্দ্রনাথ বেজিং, সাংহাই, হাংঝোউ, নানজিংয়ে একের পর এক বক্তৃতায় মূলত শান্তির কথা শুনিয়েছিলেন। মানবজাতির সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বলেছিলেন।

চীনের বসন্তে সেই সফরের মধ্যেই পঁচিশে বৈশাখ এসেছিল। তেষট্টিতম জন্মদিন রবীন্দ্রনাথ চীনেই পালন করেছিলেন। জন্মদিনে অনুরাগীরা তার চিনা ভাষায় নতুন নাম দিয়েছিলেন। সেই নাম ছিল ‘চু চেন-তাং’। চিনা ভাষায় চু-এর অর্থ চীন। আর চেন-তাংয়ের অর্থ ভারত। শতবর্ষ আগে রবীন্দ্রনাথের মধ্যেই এক সঙ্গে চীন ও ভারতকে খুঁজে পেয়েছিলেন চীনের কবি, দার্শনিক, চিন্তাবিদরা।

ফুজিয়ানের সমুদ্রের ধারের শহর শিয়ামেনে গেলে একশো বছরের পুরনো শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য দ্রষ্টব্য। অধ্যাপক ইউ লংগিউ এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভারত গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছেন। সেখানে রবীন্দ্রনাথের দর্শন নিয়েও গবেষণা চলছে।

পূর্ব চীন সাগরের তিরে এই শিয়ামেন শহর থেকেই আপাতত বিদায় জানাতে হল চীনকে। ফেরার আগে দু’দেশের সাংবাদিকরা একে অন্যের হাতে ছোট ছোট উপহার তুলে দিচ্ছিলেন। বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে। ইয়াং ওরফে স্বর্ণার গলায় গানের সুর ভাসছিল—‘আয় আরেকটিবার আয় রে সখা..’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads