মন্দাকিনীর যৌবন তখন বর্ষার জলধারার মতই স্রোতস্বিনী। শরীরে জড়িয়ে থাকা সাদা কাপড়, পাহাড়ি লাজুক মেয়ের আধুনিক যুবকের সঙ্গে প্রেম, তার উদ্দামতা সে সময়ে ফ্রেমে ধরে সিলভার স্ক্রিনে দেখানো চ্যালেঞ্জ ছিল বইকি।
‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ রাজ কাপুর পরিচালিত ১৯৮৫ সালের হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র। রাজ কাপুর পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল সেটি। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন নবাগতা মন্দাকিনীর সঙ্গে রাজিব কাপুর।
রাজ কাপুরের জন্য যেন সেসব কোনও চ্যালেঞ্জই ছিল না। মুম্বাইয়ের ধনাঢ্য কাপুর পরিবারের যেমন টাকা ঢালার কমতি ছিল না, তেমনি কার্পণ্য করেনি ছেলেকে নায়ক বানিয়ে ফেলার ঝুঁকি নিতেও।
অবশ্য নায়িকা বাছাইয়ে অডিশনের পর অডিশন চলেছে। শেষে মন্দাকিনীকে মনে ধরলে তাকে বেছে নেন পরিচালক। ওই এক ছবিতেই নবাগতা মন্দাকিনী ভারতের কত বুকে যে ঢেউ তুলেছিল তার ইয়ত্তা নেই।
অথচ মন্দাকিনী রাজ কাপুরের প্রথম পছন্দে ছিলেনই না। তার প্রথম পছন্দ ছিলেন পদ্মিনী কোলাপুরী। তিন বছর আগেই ঋষি কাপুর আর পদ্মিনী কোলাপুরীকে নিয়ে বলিউডে সাড়া জাগানো ছবি দিয়েছিলেন রাজ কাপুর। ছবির নাম ছিল প্রেম রোগ। আরও বড় কথা মাত্র ১৫ বছর বয়সে গেহরাই নামে একটি হিন্দি ছবিতে পদ্মিনী খুবই সাহসী অভিনয় করেছিলেন। মোদ্দাকথা রাম তেরি গঙ্গা মইলিতে রাজ কাপুর নায়িকাকে যেভাবে চেয়েছিলেন তা পদ্মিনীর কাছ থেকে পাবেন বলেই আশা করেছিলেন।
পরে পদ্মিনীই এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে, ৪৫ দিন শ্যুট করার পরেও মন্দাকিনীকে বাতিল করে তাকে চেয়েছিলেন রাজ কাপুর। কিন্তু পদ্মিনী রাজীবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করতে সহজ ছিলেন না। রাজকে না করে দেন তিনি।
রাম তেরি গঙ্গা মইলিতে একটি দৃশ্যে শিশুকে স্তন পান করানোর খোলামেলা দৃশ্য বেশ আলোড়ন ফেলে।
পদ্মিনী অবশ্য দাবি করেছেন, সেই দৃশ্য করতেও তার আপত্তি ছিল না। কিন্তু রাজ গোটা ছবিতে তাকে যেভাবে চেয়েছিলেন, রাজীবের সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ফ্রেমে ধরতে চেয়েছিলেন, তাতে আড়ষ্ঠ বোধ করেন পদ্মিনী।
সমালোচকরা অবশ্য বলেন, মন্দাকিনীর মধ্যে যে সতেজতা ছিল তা পদ্মিনীর মধ্যে ছিল না। পাহাড়ি মেয়ের সহজ সাধাসিধে চরিত্র ভালই ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি।
সে ছবি অমর করে রাখার জন্য আরও একজনের অবদান ভোলার নয়। সেই তিনি ছিলেন রবীন্দ্র জৈন। তার দেওয়া অসামান্য সুরে যে গানগুলি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর ও সুরেশ ওয়াদেকর তা আজও অমলিন।
চলচ্চিত্রটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র, যা মুম্বইয়ে হীরকজয়ন্তী ও অন্যান্য বড় শহরে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে।
এটি সেই বছরের শীর্ষ আয়কারী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ৩৩তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ১০টি বিভাগে মনোনয়ন থেকে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ ৫টি বিভাগে পুরস্কার ঝুলিতে তুলে আনে।
ইন্ডিয়া টু ডে, দ্য হিন্দু এবং দ্য ওয়াল অবলম্বনে