রিজার্ভ সংকটের এই সময়ে রেমিটেন্সের দিকে তাকিয়ে ছিল অন্তর্বর্তী সরকার; আর প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দিল তাদের মন ভরিয়ে।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই প্রবাস আয়ের দুটি রেকর্ডের খবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একটি হলো মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স; অন্যটি হলো টানা ৫ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স ধরে রাখা।
গত ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিরা ২.৬৪ বিলিয়ন (২৬৩ কোটি ৮৯ লাখ) ডলার স্বদেশে পাঠিয়েছেন।
এর আগে কখনও এত মাসে এত ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসেনি। আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। সেবার এসেছিল ২.৫৯ বিলিয়ন (২৫৯ কোটি ৮২ লাখ) ডলার। তার চেয়ে এবার ৪ কোটি ডলার বেশি এসেছে।
ডিসেম্বরে যে রেমিটেন্স এসেছে, বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালা বদলের পর গত পাঁচ মাসের প্রতিটিতেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাও আগে কখনো দেখা যায়নি।
তাতে ২০২৪ সালে মোট রেমিটেন্স এসেছে ২৬.৮৯ বিলিয়ন (২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৬ লাখ) ডলার। এক বছরে এত ডলারও রেমিটেন্স থেকে আগে কখনও পায়নি বাংলাদেশ।
বছরের হিসাবে এর আগে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০২২ সালে, ২২.০৭ বিলিয়ন (২ হাজার ২০৭ কোটি) ডলার।
এই বছর আগের অর্থ বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছে।
বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে রেমিটেন্সের ওপর বেশ নির্ভর করে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রিজার্ভে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এখনও কাটেনি। এর মধ্যে রেমিটেন্সের উল্লম্ফনে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বেড়ে চলেছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল প্রায় ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থ বছরের শেষ মাস অর্থাৎ গত জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
এরপর জুলাইয়ে কিছুটা কমলেও (১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার) তারপর থেকে রেমিটেন্স আর ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামেনি।
আগস্টে আসে ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার এবং ডিসেম্বরে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।
বছরের হিসাবে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। ২০২১ সালের আসে ২২ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের আসে ২১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে আসে ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, রেমিটেন্সের এই ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে যে অস্বস্তি বিরাজ করছে, তা কাটিয়ে তুলবে।
এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিবেদন: