যুক্তরাজ্যে খুচরা বিক্রির দোকানে চুরি এবং কর্মীদের মারধর ও নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে বলে এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। যদিও একটি চেইনশপ জানিয়েছে, তাদের অবস্থা অনেকটা বদলের দিকে।
স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং সামনে কাউন্সিল ট্যাক্স ও পানি-বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধি পেলে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা।
ব্রিটিশ রিটেইল অ্যাসোসিয়েশন (বিআরসি) ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ মাসের অপরাধ সমীক্ষা প্রকাশ করে এই শিল্পে চলমান ক্ষতি এবং হামলায় দ্রুত পুলিশ এবং সরকারের পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, শুধু চুরি থেকেই দোকনগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড।
ওই সময়ে একক বা সংঘবদ্ধ চোরদের থেকে নিরাপত্তা জোরদার করতে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হয়েছিল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ সালের তুলনায় হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ৩৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি। আর আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
এছাড়া বর্ণবাদী নির্যাতন এবং অস্ত্র বের করে হুমকির ঘটনাও রয়েছে, যা দিনে গড়ে ৭০ বার করে ঘটেছে।
এসব সংসিহতা এবং নিপীড়ণের মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশের উপস্থিতি ছিল বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়।
তবে কো-অপ গ্রুপের অপরাধ বিষয়ক (দোকান) প্রধান পল জেরার্ড জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে পেগাসাসের সঙ্গে কাজ করার পর থেকে খুচরো বিক্রেতারা কিছুটা সুফল পাচ্ছেন।
গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের এ উদ্যোগ শুরুর পর থেকে পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানান তিনি।
জেরার্ড বলেন, গত বছর পুলিশের উপস্থিতি ৬৬% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে দুইটিতে পুলিশের উপস্থিতি পাওয়া যেত।
“আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের অপরাধীকে ছেড়ে দিতে হতো। এখন পুলিশ আসায় অপরাধ কমছে।”
এসব অপরাধ কমাতে কো-অপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে, যা শরীরের লুকিয়ে রাখা পণ্য এবং শারীরিক আক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারদর্শী বলে জানান তিনি।
এছাড়া পণ্য এবং কর্মীদের রক্ষায় আলাদা একটি গোপান নিরাপত্তা দল গঠন করা হয়েছে। মদ ও সিগারেটের মতো উচ্চমূল্যের পণ্য সুরক্ষায় পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপদ কিয়স্ক।

জেরার্ড বলেন, অপরাধজনিত কারণে ২০২৪ সালে আমাদের আর্থিক ক্ষতি একই ছিল, দিনে এক হাজারের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে সহিংসতার হার ১৩ শতাংশ কমে দিনে ৩ থেকে ৪টি ঘটনায় নেমে এসেছে।”
এলাকা ভেদে অপরাধের মাত্রা এবং পুলিশের তৎপরতা নির্ভর করে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিই শুধু নয়, আগামীতে কাউন্সিল কর, পানি ও বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পেলে দোকান থেকে পণ্য চুরি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেরার্ড বলেন, এসব চোরদের বেশিরভাগই সেসব পণ্য অন্যত্র বিক্রি করে দেন।
“আমাদের দোকান থেকে যারা চুরি করছে এগুলো তারা ভোগ করার জন্য করছে না। বরং এর আলাদা বাজার গড়ে উঠছে। পুলিশ এবং পেগাসাসের উচিত বিষয়টির ওপর নজর রাখা।”
খুচরো বিক্রেতাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জেরে মধ্যে যোগ হয়েছে বাড়তি ৪ বিলিয়ন ডলার, যা চুরি ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের দুই মাস আগে স্কাই নিউজ এবং কনভেনিয়েন্স স্টোরস অ্যাসোসিয়েশনপরিচালিত একটি জরিপ প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায় শতকরা ৮০ জন দোকানদার এক সপ্তাহের মধ্যে এরকম অপরাধের ভুক্তভোগী হয়েছেন।
বিআরসির চিফ এক্সিকিউটিভ হেলেন ডিকিনসন ওবিই বলেন, খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে; বিক্রয়কর্মীদের থুথু দেওয়া, বর্ণবাদী নিপীড়ন এবং চাকু নিয়ে হুমকির ঘটনাও বাড়ছে।
“প্রতিদিনই এসব ঘটছে এবং অপরাধীরা আরও বেশি বেপরোয়া এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে কাজ করা তিন মিলিয়ন লোকের কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাচ্ছি এ বছরের শেষের দিকে দোকান কর্মীদের সুরক্ষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন কার্যকর করতে। খুচরো বিক্রেতা, সরকার এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।”
এ বিষয়ে পুলিশ মন্ত্রী ডেম ডায়ানা জনসন বলেন, “দোকানে চুরি এবং খুচরা কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি একদম অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি আরও বলেন, এটা সহ্য করা হবে না। খুচরা বিক্রয় কর্মীদের ওপর হামলা নিয়ে নতুন বিশেষ আইন এবং ২০০ পাউন্ডের নিচে মূল্যের পণ্য চুরির যে ইমিউনিটি ছিল তা বাতিল করা হবে।”
এজন্য টহল জোরদার করা হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট এলাকায় ‘ডেডিকেটেড’ কর্মকর্তা থাকবেন যাদের কাছ থেকে খুচরো বিক্রেতারা সাহায্য নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।