আশ্বিনের ১২ তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর তিস্তা নদীতে হঠাৎ করে খুব বেশি পানির চাপ দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে দিয়ে পানির চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে ডুবে সয়লাব হয়ে গেছে তিস্তা নদীর দুই পাড়ের বহু বাড়িঘর, আবাদি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। স্লুইসগেট খুলে দিলেই হঠাৎ বন্যা শুরু হয় এবং বন্ধ করে দিলে পানির সঙ্গে আসা পাহাড়ি বালু জমা হয়ে একদিকে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। অন্যদিকে বড় বড় চর জেগে ও আবাদি জমিতে নতুন খসখসে বালু স্তূপীকৃত হয়ে চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। সেখানে রবিশস্য আবাদ করাও দুষ্কর হয়ে যায়। দিগন্তবিস্তৃত বালুভর্তি নদীতট ও বিরানভূমি বছরের পর বছর অনাবাদি পড়ে থাকে। বালুচরে ‘স্যান্ডসার্ফিং’ করে প্রান্তিক কৃষক জীবন বাঁচানোর উপায় খুঁজে হন্যে হয়ে বেড়ান। তারা আমাদের দেশের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত হলেও যুগ যুগ ধরে তাদের জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে না।
এ ধরনের বন্যা নদীতীরবর্তী মানুষগুলোর জীবনে প্রতিবছরের বহু করুণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়। ছবি তোলা হয়, ভিডিও তৈরি হয়, টিভি, ইউটিউবে সেগুলোর দুর্দশার ছবি প্রচারিত হয়। গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে বিদেশিরাও সেসব ছবি দেখে শুধু ‘আহারে’ বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সরকারি কর্মচারীরা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করে লিখে নিয়ে যান। রাজনৈতিক নেতারা আশ্বাস দেন, এই তো সামনে তিস্তা মহাপরিকল্পনা আসছে। আরেকটু অপেক্ষা করুন।
কিন্তু সেই অপেক্ষার পালা আর শেষ হতেই চায় না। প্রতিবেশী ভারতের একান্ত বন্ধুপ্রতিম সরকার তিন-তিনবার ক্ষমতায় এসেছিল। তবুও তিস্তা পুনরুজ্জীবন করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে বহু চেষ্টা-তদবির আলোর মুখ দেখেনি। তিস্তা পাড়ের মানুষ অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে দিন গুজরান করার পর শেষ পর্যন্ত চরম হতাশার মধ্যে ডুবে গেছে।
ইতোমধ্যে তরুণদের প্রচেষ্টায় এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফসল হিসেবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মাথায় দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে সীমান্তের ওপার থেকে আসা উজানের ঢলে এক প্রলয়ংকরী বন্যা বয়ে গেছে। এর ক্ষত শুকানোর চেষ্টা করা হলেও প্রান্তিক কৃষকের জন্য তা সহজে পুষিয়ে ওঠার মতো নয়।
এরই মাঝে বারবার অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে দেশের বড় বড় শহরের রাস্তাঘাট, সারাদেশের আবাদি জমির ফসল। ঘন ঘন বন্যার কারণে বীজতলা পচে যাওয়ায় আমন ধানের চারা লাগানো সম্ভব হয়নি বহু জেলায়। শুধু দেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর ভরসা করে আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার হিসাব কষা হচ্ছে। সেই উত্তরের নদনদীতে কৃত্রিম বন্যার কারণে আমন আবাদের হিসাবে গরমিল শুরু হয়েছে।