নয় মাসের ‘বিরতিতে’ যাচ্ছে সেন্ট মার্টিন

সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে সেন্ট মার্টিনকে বলা হয় ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ। ছবি: এমডি রিপন ভূঁইয়া
সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে সেন্ট মার্টিনকে বলা হয় ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ। ছবি: এমডি রিপন ভূঁইয়া

পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে নয় মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সেন্ট মার্টিনের দরজা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেকনাফের প্রবালসমৃদ্ধ এই দ্বীপে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত দিলেও সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এর ফলে নানামুখী সংকটে পড়বেন তারা।

প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটক সেন্ট মার্টিনের দ্বার ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এবার ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীবকে উদ্ধৃত করে ডেইলি অবজারভার জানিয়েছে, সরকার সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা দিলে তারা সে অনুযায়ী অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। আর না হলে ৩১ জানুয়ারিই পর্যটকদের জন্য বন্ধ হচ্ছে সেন্ট মার্টিনের দরজা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারটি নৌপথে মোট ১২টি জাহাজ দর্শনার্থী নিয়ে যাতায়াত করলেও এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি নৌপথে পর্যটক পরিবহন। শুধু কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথটি চালু রয়েছে; বন্ধ রাখা হয়েছে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, ইনানী-সেন্ট মার্টিন, ও চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন।

রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে সেন্ট মার্টিনের নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে প্রতি ছয় ঘণ্টা পর পর যাত্রী নিয়ে জাহাজ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের পরিচালক শাহ আলমকে উদ্ধৃত করে দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, বুধবার অনলাইনে নিবন্ধিত পর্যটকরা কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, এমভি বার আউলিয়া , কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি আটলান্টিক ক্রুজ ও বে-ক্রুজ জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে গিয়েছে। অপর একটি জাহাজের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।

এ বছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার সময়সীমা কমানোর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। এর মধ্য নভেম্বরে নিষিদ্ধ করা হয় সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন; ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাওয়া এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, অন্যান্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। অথচ আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটক যেতে পারতেন।

ভ্রমণের সময় কমানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

সেন্ট মার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, “অতীতে এ রকম কোনো সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা। দ্বীপে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শত শত মানুষ।

মানবিক বিবেচনায় পর্যটকদের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মের কারণে তাদেরকে দুই মাসের আয় দিয়ে বছরের দশ মাস চলতে হবে, যা অসম্ভব।

আগের নিয়মে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত রাখার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন তিনিও।

দেশের সর্ব দক্ষিণের ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে ১০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে দ্বীপটিতে যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা।  সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে সেন্ট মার্টিনকে বলা হয় বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads