শেখ হাসিনার রায়ের আগে জয়ের হুঁশিয়ারি, ‘নিষেধাজ্ঞা না উঠলে সংঘাত’

নানা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে একই ভঙ্গিতে সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: রয়টার্স ভায়া খালিজ টাইমস।
নানা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে একই ভঙ্গিতে সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: রয়টার্স ভায়া খালিজ টাইমস।

আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে দলটির নেতাকর্মীরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন আটকে দেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দলটির আন্দোলন আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করলে দেশে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।

দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস এমন এক সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করল যখন তার মায়ের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সও সজীব ওয়াজেদের জয়ের একটি পৃথক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে, যেখানে তিনি একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, তাদের দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে বাংলাদেশে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন তিনি। পাশাপাশি ‘সাজানো রায়ে’ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে বলেও তাদের ধারণা।

সোমবারের ওই রায় ঘিরে দলটির লকডাউন কর্মসূচির মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা; আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে যান চলাচল কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।

এর মধ্যেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সহিংসতার ঘটনায় লাগাম টেনে ধরতে জড়িতদের সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।  

৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় “মানবতাবিরোধী অপরাধের” অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তার দাবি।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা বিক্ষোভে আনুমানিক ১৪০০ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে সহিংস রাজনৈতিক সংকট বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

১৭ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশ বিশ্ববিখ্যাত পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেসময় বিক্ষোভের কারণে এই শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তীব্র আন্দোলন ও সহিংসতার মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দিল্লিতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি সেখানে “রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায়” নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় খালিজ টাইমসকে বলেন, “আমরা স্পষ্ট জানি রায় কী হবে। তারা টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে এবং সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে। কিন্তু আমার মায়ের কিছুই করতে পারবে না। তিনি ভারতে নিরাপদ আছেন।”

“ট্রাইব্যুনালের রায় আগেই নির্ধারিত, কারণ সমগ্র বিচার প্রক্রিয়াই ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সাজানো নাটক,” যোগ করেন জয়, যিনি নিজেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় গিয়ে বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট।

দিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় বলে সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়, বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা। সেসময়ও তিনি ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জয় বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনের ঘোষণা বা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল তারা বিবেচনাও করবে না। কারণ দলটির নিবন্ধন মে মাসে স্থগিত করা হয়েছে এবং দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে।

“আমরা আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হতে দেব না। আমাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে, যা করার প্রয়োজন তা করব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী।”

সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, তিনি ও তার মা বাংলাদেশে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ নেই।

“গত কয়েক দিনে আপনি দেখছেন দেশজুড়ে শাটডাউন, সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে, আর এগুলো আরও বড় হতে চলেছে,” এক প্রশ্নের জবাবে যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে দেওয়ার কৃতিত্ব যেমন শেখ হাসিনার রয়েছে, তেমনি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন, যে নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছিল, কারণ তাদের বহু নেতা তখন কারান্তরীণ কিংবা বিদেশে পালিয়ে ছিলেন।

মায়ের প্রসঙ্গ টেনে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) মর্মাহত, রাগান্বিত, ক্ষুব্ধ। আর আমরা সবাই যেকোনো উপায়ে লড়াই করে ফিরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads