এক যুগ আগের অভিজ্ঞতা থেকে তামিম ইকবাল ভালো করেই বুঝতে পারছেন কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। বিসিবিকে দ্রুত পারিশ্রমিক সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়ে অভিজ্ঞ এই ওপেনার বলছেন, ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব কারণে।
এবারের বিপিএলে আলোচনার কেন্দ্রে পারিশ্রমিক সমস্যা, যা টুর্নামেন্টের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে। এতে প্রথম দুই আসরের মতো ফের ভাবমূর্তির সঙ্কটে বিপিএল।
চিটাগং কিংসের বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে প্রথম আসরে পারিশ্রমিক পাননি তামিম। পরে কিছু অংশ পরিশোধ করেছিল বিসিবি।
নাজমুল হোসেন বিসিবির নেতৃত্ব আসার পর ২০১৫ থেকে গত আসর পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়ে তেমন কোনো বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে নানা অব্যবস্থাপনা, ঘাটতি, বিতর্কের কোনো কমতি ছিল না। এবার দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংস পারিশ্রমিক নিয়ে গড়িমসি করে ফিরিয়ে এনেছে এক যুগ আগের বাজের স্মৃতি।
এই পরিস্থিতি একদমই মানতে পারছেন তামিম। ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক দেখিয়েছেন এখান থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পথ।
“আমি চাই যে, বিপিএল অনেক ভালো করুক। বিপিএলের নাম হোক অনেক। একটা সময় আমরা সত্যিই অনেক দ্রুত এগোচ্ছিলাম। কিন্তু এসব দিক থেকে (পারিশ্রমিক) ক্রিকেট বোর্ডকে খুব সতর্ক হতে হবে। টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি কী হচ্ছে না হচ্ছে, শুধু এসবের ব্যাপার নয় এটা। যখন আপনি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই করবেন, তখন অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যে কাকে দল দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন না… যাতে এরকম পেমেন্ট ইস্যু না আসে।”
“একটা দল যদি পেমেন্ট করতে না পারে এবং পরে কোনো ক্রিকেটারকে বলা হলো যে, ‘৫০ শতাংশ নিয়ে নাও’… এটা কিন্তু অতীতে হয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে, হয়তো ৫০ শতাংশ বাকি ছিল, এরপর একটা দরকষাকষি হয়ে ক্রিকেটাররা ২৫ শতাংশ পেয়ে খুশি মনে চলে যায়। কিন্তু দোষ তো এখানে ক্রিকেটারের না, ভুল থাকলে এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজির থাকবে আর বিসিবির থাকবে।”
নানা বিতর্কের পথ পেরিয়ে টুর্নামেন্ট চলে এসেছে শেষ পর্যায়ে। তামিমের চাওয়া, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে আসর শেষ হওয়ার আগেই সব সমস্যার সমাধান হোক।
“এখনও যেহেতু টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায়নি, আমি নিশ্চিত যে, তারা (বিসিবি) এটা সমাধানের চেষ্টা করছে। আশা করব, এরকম কিছু যাতে না হয়। কারণ, এটা শুধু বিপিএল টুর্নামেন্টকেই ছোট করে না, আমাদের দেশের ব্যাপারেও একটা বাজে বার্তা যায়। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার আছে, যারা আসতে চায়। কিন্তু এরকম হলে তখন সমস্যা হয়।”
“এজন্যই যখন ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাই করা হয়, তখন যেন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়।… যেটা বললাম যে, এই টুর্নামেন্টের বিশাল সম্ভাবনা আছে, আমরা স্রেফ ঠিক কাজগুলি করছি না।”
একাধিক দলের পারিশ্রমিক সমস্যা, ভালো বিদেশি ক্রিকেটারদের প্রাপ্যতা, খেলতে আসা বিদেশি ক্রিকেটার, খেলার মান নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন। তামিম মনে করেন, দল কমানো হলে অনেক ঝামেলাই মিটে যাবে।
গত বছরের মতো এবারও বিপিএলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টোয়েন্টি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টির সূচি। ওসব টুর্নামেন্টকেই বেছে নিয়েছেন বেশিরভাগ তারকা ক্রিকেটার। তাই এবার প্রায় তারকাশূন্য বিপিএল।
ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার না থাকায় অচেনা, দীর্ঘ দিন ক্রিকেটের বাইরে থাকা, এমনকি নিজ দেশের লিগেও সুযোগ না পাওয়া অনেক ক্রিকেটার নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। তাতে অখ্যাত, অপরিচিত ক্রিকেটারদের দেখা যাচ্ছে বিপিএলে।
মানহীন বিদেশি ক্রিকেটারদের পরিবর্তে বিগ ব্যাশের মতো সর্বোচ্চ দুজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম বিপিএলে করা যায় কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তামিম বললেন দল কমাতে।
“আমার মতে (সর্বোচ্চ) চার বিদেশি (ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম) ঠিক আছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি সংখ্যা নিয়ে আপনি ভাবতে পারেন। আপনি দেখেন, আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ক্রিকেটার কিন্তু পাকিস্তানে। তবু পিএসএল যখন শুরু হয়েছে, পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে হয়েছিল। যে কারণে সেখানে ক্রিকেটের মান খুব খুব ভালো। আস্তে আস্তে এক-দুইটা ফ্র্যাঞ্চাইজি বেড়েছে।”
“আমরা বিপিএল শুরু করেছিলাম ৮টা দিয়ে… ৭টা দল দিয়ে। ক্রিকেটাররা হয়তো অভিযোগ করতে পারে, দল একটা বেশি থাকলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ থাকবে বেশি। অন্যভাবে চিন্তা করলে দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতাও তো বাড়বে! এনসিএল বা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে বিপিএলে দল নিশ্চিত করার ক্ষুধাটা বাড়বে। আমার মতে, বিপিএলে ৬ দলের বেশি হওয়া উচিত নয়, ৫ দল হলে বেশি ভালো, সর্বোচ্চ ৬টি হতে পারে।”
এ সম্পর্কিত আরও খবর: