১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস মানি না। ৫৪ বছরের প্রতিশোধ নেয়ার সময় হয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার দায় নিয়ে সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ এই বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নিষিদ্ধ; চেতনার ঠিকাদারীও তাই এখন অনুপস্থিত। এই চেতনার ঠিকা এরাই নিয়েছিল। আর কারো ঠেকা পড়েনি চেতনা বিস্তারের। তাই, ৭১ এর পরাজয়ের শোধ নেয়ার জন্য এটাই মোক্ষম সময়।
ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে। বন্ধু দেশটির সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাবেক পূর্বপাকিস্তান সফর করে গেছেন। গেল ৫৪ বছরে এত নির্বিঘ্নে আর স্বস্তিতে তারা এখানে ঘুরে যেতে পারেননি। সুবর্ণ সময় দেশটির। নয়া চেতনার বাতি আজ জ্বলজ্বলে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাঙ্গার লড়াইয়ে শরিক হওয়া আর দেড়কোটি মানুষকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিদান হিসেবে এদেশের মানুষ রাষ্ট্রীয় মদদে সেই প্রতিবেশীর প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে শোধ নিয়েছে কিছুটা। সামরিক বাহিনীর অবসরে যাওয়া কর্তাদের সংগঠনের প্রধান পাণ্ডা সেই দেশের বিরোধপূর্ণ সাতটা অঞ্চল ভেঙ্গে সাতটি আলাদা দেশ করার ভূরাজনৈতিক কৌশলের কথা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। তাদের বন্ধুত্ব প্রত্যাখ্যান করে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা ১৯৪৭ সালে রেডক্লিফ কর্তৃক মানচিত্র আঁকার পর নিজেরা মানচিত্র নিয়ে নাড়াচাড়া দিচ্ছি। বিশ্ব দরবারে আজ আমরা ভূরাজনীতির বরপুত্র।
এদেশে জাতির পিতা কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মদিন সাড়ম্বরে পালন হচ্ছে। অর্ধশতাব্দী ধরে নির্যাতিত বিহারীরা আজ মন খুলে কথা বলতে পারছে। তাদেরই সম্প্রদায়ের এক ইউটিউবার আজ বিদেশের মাটিতে বসে দেশ শাসন করছে। লক্ষ কোটি ভক্ত বেষ্টিত সেই লোক, বিরোধীরা যাকে টোকাই বলে অসম্মান করে, সে বুক ফুলিয়ে বলেছে তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল এটা গর্বের। সেই ইউটিউবার বুলডোজার পাঠিয়ে ১৯৭১ এ বিচ্ছিন্নতা পরিচালনার কেন্দ্রভূমি ৩২ নম্বরকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পরাজয়ের শোধ নেয়া হচ্ছে। জাতির পিতা, বা জাতির ভাই হিসেবে ১৯৭৫ সালে কথিত জাতির পিতাকে হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনিদের নিয়ে জয়গান গাওয়া হচ্ছে। ইতিহাসের ছাইচাপা আসল বয়ান আজ উতলা করছে জাতিকে।
আমরা আজ সভ্যতার আতুড়ঘর। নয়া সভ্যতা বিনির্মার্ণের অগ্রসেনানী। একটা কাগজে স্বহস্তে স্বাক্ষর দিয়ে এই জাতির সূর্যসন্তান জানিয়ে দিয়েছেন যে, জাতি আজ সভ্য হয়েছে। দুনিয়ার কোনায় কোনায় আজ নয়া সভ্যতা তৈরির এই থিওরি নমস্য এক বস্তু। সিন্ধু, পারস্য বা মায়া সভ্যতা এগুলো সব খ্রিস্টের জন্মের আগের। খ্রিস্টের জন্মের পরে এটাই একমাত্র সভ্যতা যেটার জনক আমাদেরই এক সূর্য সন্তান। দুনিয়ার তাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বা এন্থ্রোপলজি, আরকিওলজি বিভাগগুলো এটা নিয়ে পঠন-পাঠন গবেষণা করবে।
১৯৭১ সালের বিচ্ছিন্ন হওয়ার লড়াইয়ে যুক্ত কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকাদের কাউকে কাউকে জুতার মালা পরানো হয়েছে। আদলত চত্বরসহ প্রকাশ্য ময়দানে তাদেরকে লাত্থি, ঘুষি মারা হচ্ছে। দেশভাঙার অপরাধে তাদেরকে নিকৃষ্ট প্রজন্ম বলে মাহফিলে, মজমায় সনদ দিয়ে তাদের কৃত পাপের কিছুটা বদলা নেয়া হচ্ছে। ছাত্ররা শিক্ষকদের পিটিয়ে, জুতার মালা পরিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করেছে আয়োকম করে, মচ্ছবের সানাইয়ের তরঙ্গে।
মুক্তিযুদ্ধের নামে ১৯৭১ সালের সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী চেতনার কথা বললে গলা চিপে ধরে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে ইনকিলাবের বাংলায়, গোলাম আজমের বাংলায়, নিজামীর বাংলায়, কাদের মোল্লার বাংলায় এসব চেতনাবাজি আর চলবে না। এখানে স্বাধীনতা মানে ২৪। মুক্তি মানে জুলাই ৩৬।
আসুন, জুলাই চেতনার ছায়াতলে জড়ো হই। এই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিই।
আর যদি সেইসব চেতনার কথা বলেন তাহলে জেনে রাখুন, জেলে যাবেন। প্রকাশ্যে হেনস্থা হবেন। সোস্যাল মিডিয়ায় বিচার বসবে। রায় হবে। সাজা হবে। ধরে পেটানো হবে। পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে মেরে। চাকরিচ্যুত করা হবে। ভাতে মারা হবে।
জেনে রাখবেন, চারদিকে লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানপ্রেমী রয়েছে। ইনকিলাবি রয়েছে। আমাদের সূর্য সন্তান নিয়াজি, ফরমান আলীদের রুহানী, বায়োলজিক্যাল সন্তান রয়েছে। তারা আপনাকে দেখে নেবে।
সময় থাকতে সোজা হয়ে যান। আসল স্বাধীনতা যেটা ৩৬ জুলাইয়ে, ২৪ এ অর্জিত হয়েছে সেটার ছায়াতলে জড়ো হউন।
আমি ১৬ ডিসেম্বর মানি না। নতুন দিবস তালাশও করি না। হৃদয়ে ৩৬ জুলাই। হৃদয়ে ২৪ এর চেতনা। অন্তরে প্রতিশোধের জ্বলন্ত আগুন। ৫৪ বছরের প্রতিশোধের আগুন। ২০২৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বলতে কিছু নেই। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ: লেখক, চিন্তক ও গবেষক



