ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান সৌদির

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর নাম উল্লেখ করা হলেও সেখানে সৌদি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতানিয়াহুর মন্তব্যের বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল করার প্রয়াস থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের কাছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অর্থ এবং সেই ভূমির সঙ্গে এর মানসিক, ঐতিহাসিক ও আইনি সম্পর্ক কী, এই উগ্রপন্থি ও দখলদারদের তা বোঝার ক্ষমতা নেই। এই ভূমিতে ফিলিস্তিনি জনগণই প্রথমে বসবাসের অধিকার রাখে।

বৃহস্পতিবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্ভট এক তত্ত্ব দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সৌদি আরবে অনেক খালি জায়গা আছে দাবি করে সেখানে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবকে প্রস্তাব দেন তিনি। পাশাপাশি প্রস্তাবিত গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে নাকচ করেন তিনি।

ইসরায়েলের ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়ার মতো যথেষ্ট জায়গা সৌদি আরবে আছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেখানে তাদের অনেক ভূমি আছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে বিপন্ন করবে, এমন কোনো চুক্তি তিনি করবেন না।

সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলি নেতার মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে মিশর ও জর্ডান। শনিবার এক বিবৃতিতে কায়রো তেল আবিবের প্রস্তাবকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রস্তাব সরাসরি সৌদি সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, তারা নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ভাতৃত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর অবস্থানকে গুরুত্ব দেয়।

ফিলিস্তিনের দুটি অংশের মধ্যে বৃহৎ অংশ পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গাজার নিয়ন্ত্রণকর্তা সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের নজিরবিহীন এক হামলায় ১ হাজার ২১০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। সেদিন ইসরায়েলিদের হত্যার পাশাপাশি আড়াইশ জনের মতো ইসরায়েলিকে তুলে নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা।

সেই হামলার জের ধরে পাল্টা হামলা চালিয়ে গত এক বছরের বেশি সময়ে গাজা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল, নিহত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিন আগে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। সেই থেকে যুদ্ধ বন্ধ রয়েছে গাজায়। তবে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা জানালে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব জানায়, পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা না হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটবে না তারা। এরপরই নেতানিয়াহু সৌদি আরবের ভূমিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের ‘উদ্ভট’ তত্ত্ব হাজির করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads