সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বৃদ্ধির খবরে আগ্রহী হয়ে কিনতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে মানুষকে। কারণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি রয়েছে বন্ধ।
আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম রবিবার থেকে বন্ধ করে দেয় জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। তবে পরে দুঃখ প্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছে অফিসের নোটিস বোর্ডে, ওয়েবসাইটেও সেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় সঞ্চয় অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের কাজ চলছে বলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অনলাইন পদ্ধতি আপগ্রেডেশনের কাজটি শুরু করে সঞ্চয় অধিদপ্তর। এ কারণে সার্ভার বন্ধ করতে হয়েছে।
কবে নাগাদ সঞ্চয়পত্র বিক্রি পুনরায় শুরু হবে, সে বিষয়ে নোটিসে কিছূ বলা হয়নি।
তবে কাজ শেষে আগামী বুধবার নাগাদ সঞ্চয়পত্র বিক্রি ফের শুরু হতে পারে বলে সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রথম আলো জানিয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জুলাই। বর্তমানে অর্থ বিভাগের স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারির (এসপিএফএমএস) মাধ্যমে এটির কার্যক্রম চলছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ করার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে জানানো হয়নি বলে নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
সোমবার সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরে এসে বেশ কয়েকজন ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে মহিবুল ইসলাম নামের একজন প্রথম আলোকে বলেন, “নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিবর্তে সরকার যদি সার্ভার বন্ধের বিষয়টি পত্রিকায় ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচার করত, তাহলে বিষয়টা সহজে আমরা জানতে পারতাম। কাজটা অর্থ বিভাগও করতে পারত, আবার সঞ্চয় অধিদপ্তরও করতে পারত।”
অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, “দু-এক দিনের মধ্যে সেবাটি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।”
মুনাফার হার বৃদ্ধি
নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়াতে গত বৃহস্পতিবারই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চিঠি দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি)। তবে আইআরডি এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
কয়েক দফা কমানোর পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়াচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে বিনিয়োগকারীদের আগের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী মুনাফার হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে ১১ দশমিক চার শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দেওয়া হয়।
বর্তমানে চালু আছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া রয়েছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। প্রবাসীদের জন্য বন্ড রয়েছে তিনটি- ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। বন্ডের মুনাফার হার বাড়ানোর কথা অবশ্য অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়নি।
চিঠিতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা খতিয়ে দেখা যায়, কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
শুধু সুদের হারের পরিবর্তনই নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি- ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।
নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে।
সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বাড়িয়ে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতিতে পড়েছে সরকার। অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
এই ঘাটতি মেটাতে ভ্যাট-কর এরই মধ্যে বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে বেশি ঋণ বা ধার করার জন্য এর বিক্রি বাড়াতে চায়।