যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মী ছাঁটাইয়ের ধাক্কায় দেশটির জাতীয় উদ্যানে এক অভাবনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতীয় উদ্যানের বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণার কাজ ছেড়ে ক্যাম্পগ্রাউন্ডের বাথরুম পরিষ্কার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের মতো জনপ্রিয় স্থানে, যেখানে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসেন, সেখানে কর্মী সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় এক হাজার ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস) এবং তিন হাজার চারশ’ ফরেস্ট সার্ভিস কর্মী ছাঁটাইয়ের পর থেকেই এই সংকটের শুরু। কর্মী সংকটের ফলে এ বছর পার্কের ভরা মৌসুমে শৌচাগার পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব গিয়ে পড়েছে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের কাঁধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী এসএফগেইটকে বলেন, “যখন আমাদের ম্যানেজার প্রথম এই নতুন কাজের কথা জানান, তখন আমি কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। নতুন প্রশাসনের কারণে কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকায় আমরা এমনিতেই কর্মী সংকটে ভুগছি, তার ওপর আমাদের কাজের বিবরণের বাইরের কাজ চাপানো হচ্ছে।”
ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস সাধারণত প্রতি বছর সাত-আট হাজার মৌসুমী কর্মী নিয়োগ করে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে এই নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে পার্কগুলোতে আবর্জনা জমে যাওয়া এবং সুযোগ-সুবিধা নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট স্টেফানি বার্খার্টের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে পার্কের বিজ্ঞান, শিক্ষা, আইটি, বাণিজ্যিক সেবা ও নিরাপত্তা– এই পাঁচ বিভাগ থেকে কর্মীদের ১৫ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত আপার পাইন্স ক্যাম্পগ্রাউন্ডের ১০টি বাথরুম পরিষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এই কাজের জন্য মনোনীতদের মধ্যে জীববিজ্ঞানী, জলবিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক বা মৌসুমি কর্মী নিয়োগের মতো বিকল্প উপায় বিবেচনা করা হলেও সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ইমেইলে আরও উল্লেখ করা হয়, “আমরা চাই না পর্যটকরা খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তাই স্থায়ী কর্মীদেরই এই দায়িত্ব নিতে হবে।”
ইয়োসেমাইট ক্লাইম্বিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা কেন ইয়েগার বলেন, “আমি জানতে আগ্রহী এই নির্দেশ কতদূর পর্যন্ত গেছে। সুপারিনটেনডেন্ট কি টয়লেট পরিষ্কার করছেন? আমি কাউকে অপমান করতে চাই না, তবে আমি জানতে আগ্রহী, বিভাগীয় প্রধানরা কি এটি করছেন?”
পার্ক কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাসেবক, ক্যাম্পগ্রাউন্ড হোস্ট বা বাইরের পরিচ্ছন্নতা সেবার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও সময়ের সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হয়নি। এমনকি পোর্টেবল টয়লেট ব্যবহারের পরিকল্পনাও বাতিল করা হয়, কারণ এটি দর্শনার্থীদের প্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি, সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং টয়লেট পরিষ্কারের প্রক্রিয়া শেখানো হয়। তা সত্ত্বেও অনেকে এই পরিস্থিতিকে পার্কের বৈজ্ঞানিক কমিউনিটির মনোবল ভাঙতে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল হিসেবে দেখছেন। একজন কর্মী বলেন, “বাথরুম পরিষ্কার করতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু আমাদের নেতৃত্বের নীরবতা আমাকে হতাশ করে।”
জাতীয় উদ্যানের সমর্থকরা সতর্ক করেছেন, এই নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা ও ছাঁটাইয়ের ফলে আবর্জনা জমা, অবকাঠামোর ক্ষতি এবং দীর্ঘ অপেক্ষার সময় বাড়তে পারে। তবে কর্মীরা একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণের সময় একজন কর্মী বলেন, “আমরা সবাই একই পোশাক পরে এবং একে অপরের সহকর্মী হিসেবে গর্বিত।”
এদিকে, পার্কের প্রধান কর্মকর্তা জো মেয়ার জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে নতুন কর্মী যোগ হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আরও ছাঁটাই ও কাজের চাপ বাড়তে পারে। একজন কর্মী বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে এই সংকট মোকাবিলা করছি, কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।”