সিট নম্বর ‘১১ এ’: আহমেদাবাদের দুর্ঘটনা ফিরিয়ে আনল ২৭ বছর আগের ঘটনা  

সাতাশ বছর আগে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রুয়াংসাকের ঘটনা ঘুরে ফিরছে সোশাল মিডিয়ায়।
সাতাশ বছর আগে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রুয়াংসাকের ঘটনা ঘুরে ফিরছে সোশাল মিডিয়ায়।

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ বসেছিলেন আসন নম্বর ১১এ-তে। সাতাশ বছর আগে ১৯৯৮ সালেও ভয়াবহ বিমান দুর্ঘনায় বেঁচে ফিরেছিলেন থাইল্যান্ডের গায়ক রুয়াংসাক লওচুসাক। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো তিনিও বসেছিলেন সেই একই আসনে, অর্থ্যাৎ ১১এ আসনে।

বিষাদের ঘটনায় এরকম কাকতাল প্রকাশ্যে আসতে সোশাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে হৈ চৈ। কেউ কেউ এই ঘটনাকে অলৌকিক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

রুয়াংসাক যখন দুর্ঘটনায় পড়েন তখন তার বয়স ছিল বিশের কোঠায়। ১৯৯৮ সালের ১১ ডিসেম্বর থাই এয়ারওয়েজের টিজি২৬১ ফ্লাইটে ছিলেন তিনি। অবতরণের সময় যেটি বিধ্বস্ত হয় দক্ষিণ থাইল্যান্ডে। নিহত হন ১৪৬ যাত্রীর মধ্যে ১০১ জন।

ভারতে বিমান দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়তেই নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৭ বছর বয়সী রুয়াংসাক থাই ভাষায় যে পোস্টটি দিয়েছেন তাতেই তিনি তুলে ধরেছেন তার সেদিনের বেঁচে ফেরার সঙ্গে এই মিলের কথা।

লিখেছেন, ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী যে আসনে বসেছিলেন আমিও ঠিক একই আসনে বসেছিলাম। আসন ১১ এ।

গায়ক রুয়াংসাক, যিনি জেমস রুয়াংসাক নামেই পরিচিত। গায়কের ফেইসবুক থেকে নেওয়া।

জেমস রুয়াংসাক নামে পরিচিত গায়কের এই পোস্টটিতে ১৪ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া এসেছে, মন্তব্যের ঘরে জমা পড়েছে অর্ধ সহস্রাধিক মন্তব্য, আর শেয়ার হয়েছে প্রায় দুই হাজার।

থাইল্যান্ডের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো এনিয়ে করেছে প্রতিবেদন, হাজার হাজার পাঠক তা শেয়ার করে রীতিমতো ভাইরাল করে দিয়েছেন রুয়াংসাকের অভিজ্ঞতা। আর তাতে ফিরে এসেছে সেই দুর্ঘটনার খবরও।

বিভিন্ন পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছরের কাছাকাছি বিমানে ওঠেননি। নিজের বর্তমানকে তিনি অভিহিত করেছেন দ্বিতীয় জীবন হিসেবে। পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন রুয়াংসাক।

তিনি বলেছেন, “দুর্ঘটনার পর ১০ বছর ধরে আমার উড়তে কষ্ট হচ্ছিল। বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হতো।”

“আমি কারো সাথে কথা বলা এড়িয়ে যেতাম এবং সবসময় জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতাম, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাউকে জানালা বন্ধ করতে দিতাম না,” যোগ করেন রুয়াংসাক।

“যদি বাইরে কালো মেঘ বা বৃষ্টিপাত দেখি, তাহলে আমার খুব খারাপ লাগত, যেন আমি নরকে আছি।”

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার বিবরণ তিনি এখনও মনে করতে পারেন: “বিমানটি যে জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই জলাভূমির শব্দ, গন্ধ এমনকি পানির স্বাদও আমি এখনও মনে ভেসে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে, আমি সেই স্মৃতি, অনুভূতি নিজের কাছেই জমা করে রেখেছিলাম।”

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী রমেশও বসেছিলেন সিট নম্বর ১১ এ-তে। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা ছবি।

দুদিন আগে ১২ জুন দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, যেটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। বিমানে যাত্রী ও ক্র মিলে ছিলেন ১৪২ জন, যাদের মধ্যে একমাত্র বিশ্বাস রমেশ কুমার বেঁচে যান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বাস কুমার সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তার মনে হয়েছিল তিনি বেঁচে ফিরতে পারবেন না, তবে যখনই তিনি বুঝতে পেলেন বেঁচে আছেন তখন আর দেরি করেননি। “তখনই সিটবেল্ট খুলে যেভাবে পারি বের হয়ে আসি,” যোগ করেন রমেশ।

আরও পড়ুন