কমল হাসান-শ্রীদেবী অভিনীত ক্লাসিক ছবি ‘সাদমা’ দেখেননি এমন সিনেমাপ্রেমী কমই আছেন। সেই ছবিতে সোনি নামে ছোট্ট একটি চরিত্র করেছিলেন যিনি, তার সেই দাগ কাটা অভিনয়ের কথাও নিশ্চই মনে আছে অনেকের। ঠিক তাই, সিল্ক স্মিতা। ভারতের প্রথম ‘সেক্স বম’ খ্যাত অভিনেত্রী। দুঃসাহসিক সব দৃশ্যে খোলামেলা অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন দর্শকের। ভারতীয় হিন্দি ছবির ‘ভ্যাম্প রানি’ হেলেনের থেকেও কয়েকগুণ এগিয়ে ছিল তার আবেদনময়ী অভিনয়।
সিল্ক স্মিতা মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও হিন্দি ভাষায় সাড়ে চারশ’র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পর্দার নাম সিল্ক স্মিতা হলেও তার মূলত বিজয়লক্ষ্মী বদলাপতি তার পারিবারিক নাম। জন্ম ২ ডিসেম্বর, ১৯৬০। ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পরলোকে পাড়ি জমান।
১৯৭৯ সালের তামিল ছবি ভান্দিচক্রমে ‘সিল্ক’ নামে একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নজড়ে আসেন সিল্প স্মিতা। ১৭ বছরের অভিনয় জীবনে বহু আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এই নারী অভিনেত্রী।
তেলুগু পরিবার থেকে উঠে আসা স্মিতাকে শৈশব থেকে লড়তে হয়েছে অসচ্ছলতার সঙ্গে। দারিদ্রতার থাবায় চার ক্লাসে থাকতেই ইতি টানতে হয় স্কুলের গণ্ডী। আকর্ষণীয় মুখশ্রী আর মায়াবী চাহনির কারণে একবার তার দিকে চোখ পড়লে ফেরানো কঠিন ছিল। বিয়েটাও করতে হয় সে কারণেই অল্প বয়সে। অবশ্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে খুব বেশি দিন সংসারে টিকতে পারেননি তিনি। পালিয়ে বাঁচেন!
স্মিতার অভিনয় জীবনের শুরু একজন অভিনেত্রীর মেকআপ সহযোগী হিসাবে। ছোট চরিত্র। পরবর্তীতে এভিএম স্টুডিওর কাছে একটি ময়দা মিলের পরিচালক বিনু চক্রবর্তী তাকে ‘আবিষ্কার’ করেন। বাড়িতে নিয়ে নাম বদলে রাখেন ‘স্মিতা’। ইংরেজি শিখেছিলেন বিনু চক্রবর্তীর স্ত্রীর কাছে, শেখেন নাচও।
১৯৭৯ সালে তামিল ছবি ভান্দিচক্রমে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। সেই ছবির চরিত্রের নামেই পরবর্তীতে ‘সিল্ক স্মিতার’ আত্মপ্রকাশ।
পরবর্তীতে যৌন আবেদনময়ী একের পর এক অভিনয়ের মাধ্যমে হয়ে ওঠেন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি।
আশি এবং নব্বইয়ের দশকে যুব সমাজের কাছে রীতিমতো ‘ক্রাসে’ পরিণত হন তিনি।
যৌন আবেদনময়ী অভিনয়ে সফলতার চূড়ায় থাকলেও ব্যক্তি জীবনে ছিলেন নিঃসঙ্গ। ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ সালের সকালে তিনি তার বন্ধু, নৃত্যশিল্পী অনুরাধার সাথে যোগাযোগ করে বলেছিলেন যে, একটা বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করতে চান, যা তাকে পোড়াচ্ছে। বলেছিলেন তার বাচ্চাকে স্কুলে রেখে এসেই তিনি দেখা করবেন।
ওই সকালেই স্মিতাকে তার চেন্নাইয়ের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর রহস্য আজও অজানা রহস্যই রয়ে আছে।
মৃত্যুর পর সিল্ক স্মিতার জীবনের উপর তৈরি হয়েছে একাধিক সিনেমা। ২০১১ সালে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ নামে সিল্ক স্মিতার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত একটি চলচ্চিত্র হিন্দিতে প্রযোজনা করেন একতা কাপুর। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মিলান লুথরিয়া এবং অভিনয় করেন বিদ্যা বালন (যিনি পরে সেরা অভিনেত্রীর জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন)। সিনেমাটি তামিল ও তেলুগু ভাষায় ‘ডাব’ করা হয়েছিল।
২০১৩ সালে ‘ডার্টি পিকচার: সিল্ক সাক্কাথ হট’ নামে একটি কন্নড় চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল, যাতে নাম চরিত্রে অভিনয় করেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী বীণা মালিক। ২০১৩ সালে সিল্ক স্মিতা চরিত্রে সানা খান অভিনীত ‘ক্লাইম্যাক্স’ নামে আরেকটি ছবি মুক্তি পায়।
এসটিআরআই সিনেমা কোম্পানি সিল্ক স্মিতার জন্মদিন উপলক্ষে আরও একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। ‘সিল্ক স্মিতা-কুইন অফ দি সাউথ’। ছবিতে স্মিতার চরিত্রে ‘স্ক্রিনে’ দেখা যাবে চন্দ্রিকা রবিকে। ছবিটি প্রযোজনা করছেন বিজয় অমৃতরাজ।