বেলজিয়ামে নতুন এক বিরল আইনের অধীনে যৌনকর্মীরাও আনুষ্ঠানিক নিয়োগ চুক্তি, স্বাস্থ্যবীমা, অবসরকালীন ভাতা, মাতৃত্বকালীন এবং স্বাস্থ্য ছুটির জন্য বিবেচিত হবেন, যা বিশ্বব্যাপী এরকম প্রথম আইন।
সারাবিশ্বে কয়েক লাখ যৌনকর্মী রয়েছেন। ২০২২ সালে এই বেলজিয়ামেই যৌনকর্মকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও জার্মানি, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এটি ছিল বৈধ।
পাঁচ সন্তানের মা সোফি যেমন বলছিলেন তার তিক্ত অভিজ্ঞতা ও অপারগতার কথা।
“আমি যখন নয় মাসের গর্ভবতী ছিলাম তখনও আমাকে কাজ করতে হয়েছিল,” বলেন সোফি, যিনি বেলজিয়ামের একজন যৌনকর্মী।
“আমাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার এক সপ্তাহ আগেও খদ্দেরদের সঙ্গে সেক্স করতে হয়েছিল।”
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সোফির যখন পঞ্চম সন্তান জন্ম নেয়, তখন তাকে চিকিৎসক ছয় সপ্তাহের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তার বিকল্প ছিলো না, ফিরতে হয় কাজে।
সোফি বলেন, “আমি থামতে পারছিলাম না, কারণ আমার অর্থের প্রয়োজন ছিল।”
তার জীবন অনেক সহজ হতো যদি মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার থাকতো, নিয়োগকর্তা তাকে পারিশ্রমিক প্রদান করতেন।
নতুন আইনের অধীনে এখন থেকে যৌনকর্ম অন্য যেকোনো কাজের মতোই বিবেচিত হবে বেলজিয়ামে।
“মানুষ হিসাবে আমাদের অস্তিত্বের জন্য এটি একটি পরম পাওয়া,” সোফি বলেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ইরিন কিলব্রাইড বিবিসিকে বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি আমূল পরিবর্তন, এবং এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের যেকোনো দেশের মধ্যে এগিয়ে রাখার মতো পদক্ষেপ।
“আমাদের প্রতিটি দেশকে একই পথে এগিয়ে যেতে হবে।”
অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, এই আইনের অধীনে বেশ কিছু বিষয় যেমন, মানব পাচার কিংবা নির্যাতনের মতো বিষয় আসেনি, যার ফলে এই আইনের অধীনে এসব প্রতিরোধ করা হয়তো সম্ভব হবে না।
“এটি বিপজ্জনক, কারণ এটি এমন একটি পেশাকে স্বাভাবিক করে তুলবে, যা সবসময়ই হিংস্র,” বলেন ইউলিয়া ক্রুমিয়েরে, যিনি ইসালার নামে একটি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবক, যারা বেলজিয়ামের রাস্তায় যৌনকর্মীদের সাহায্য করে থাকে৷
মেল ভয় পেয়েছিলেন যখন তাকে কনডম ছাড়াই একজন খদ্দেরের সঙ্গে ‘ওরাল সেক্স’ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। তার কিছুই করার ছিলো না, কারণ তার হাতে অন্য কোনো বিকল্প ছিলো না।
“আমার সামনে বিকল্প ছিলো এক হলে রোগ সংক্রমণ করা, অথবা না খেয়ে থাকা।”
তবে নতুন আইনের পর মেল এখন স্বস্তি বোধ করছেন। তার ধারণা, তিনি এখন খদ্দেরকে ‘না’ বলতে সক্ষম হবেন।
“আমি আমার ম্যাডামের (নিয়োগকর্তা) দিকে আঙুল তুলে বলতে পারবো: আপনি এই এই শর্তাবলী লঙ্ঘন করছেন এবং আপনার আমার সাথে ‘এইভাবে’ আচরণ করা উচিত।”
বিবিসি অবলম্বনে