প্রশাসনকে থাকতে হবে ‘আমাদের আন্ডারে’, দম্ভোক্তি জামায়াত নেতার

জামায়াতে ইসলামীর নেতা শাহজাহান চৌধুরী।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা শাহজাহান চৌধুরী।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামীর লাভের খাতা ক্রমেই বড় হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে, মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ওপর দলটির কর্তৃত্ব বেড়েছে। এই পথ পেরিয়ে এখন আওয়ামী লীগশূন্য ভোটের মাঠে বিএনপিকে হটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখছে তারা।

সেই স্বপ্ন পূরণে জামায়াত যে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর ছকও এঁটেছে, তা বেরিয়ে এল দলটির শীর্ষ সারির এক নেতার কথায়। তিনি শাহজাহান চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য, চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

শাহজাহান চৌধুরীর এক বক্তৃতার ভিডিও এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল; যেখানে তিনি বলছিলেন, নির্বাচনের সময় গোটা প্রশাসন জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তার ভাষ্যে, “নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়…যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।”

তিনি আরো বলেন, “যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, নুরুল আমিন ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন, আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন।”

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতকে জুলাই অভ্যুত্থানের ঠিক আগেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার।

তার এক সপ্তাহের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের পতদন ঘটলে জামায়াতের পুনরুত্থান ঘটে। ইউনূস সরকার দায়িত্ব নিয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এরপর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। তার আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডাক পেতে থাকে জামায়াত। এসব দেখে বিএনপিকেও বলতে হচ্ছে, জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারের মদদ পাচ্ছে।

এখন শাহজাহান চৌধুরীর এমন বক্তব্যের পর নতুন আশঙ্কা জেগেছে বিএনপি নেতাদের মনে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্যে প্রমাণ হয় জামায়াত নতুন করে আরেকটি ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।”

শাহজাহান চৌধুরী যে সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন, তাতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তবে শাহজাহান বক্তব্য দেয়ার সময় সময় তিনি মঞ্চে ছিলেন না বলে প্রথম আলো জানিয়েছে। তিনি সভায় যোগ দেন পরে। 

সভায় জামায়াত আমির আবার ভিন্ন ভঙ্গীতে বলেন, “আমরা চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে চাই, আমরা অতীতেও চাঁদাবাজি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে জুলুম সহ্য করেছি। পটপরিবর্তনের পর আমরা কারও ওপর জুলুম হতে দিইনি। প্রশাসন ভয় পেত, আমরা তাদের সাহায্য করেছি, উৎসাহ দিয়েছি।”

তবে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের অন্যতম নেতা, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কথায় আবার এর বিরোধিতা পাওয়া গেল।

তিনি রোববার এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “মজলুম জালিম হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধীরা ফ্যাসিবাদী হচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি হতাশা ও ক্ষুব্ধতার। জুলুমকে ইনসাফ দিয়ে, সহিংসতাকে দরদ দিয়ে প্রতিস্থাপন না করে যাঁরা নতুন মাত্রার জুলুম ও সহিংসতা করে বেড়াচ্ছেন, তারা ফ্যসিবাদের পুনর্জাগরণের জন্য দায়ী থাকবেন।”

এই পরিস্থিতিতে জামায়াত শাহজাহান চৌধুরী বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বলে বিবিসি বাংলা খবর দিয়েছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ শাহজাহানের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বক্তব্যটি (শাহজাহান চৌধুরীর) আমরা দেখেছি। এটা একান্তই উনার বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তার এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না।”

“আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি,” বলা হয় বিবৃতিতে।

তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা জানানো হয়নি বিবৃতিতে।

আরও পড়ুন