টানা ১০ ম্যাচ ধরে জয় শূন্য দলকে জয় উপহার দিল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলো দুই ইনিংসেই। বোলিংও ততটা ভালো হলো না। মূলত মেহেদী হাসান মিরাজের একার চেষ্টায় লড়াই করতে পারল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই হেরে ভীষণ হতাশ নাজমুল হোসেন শান্ত। এই হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। একই সঙ্গে দলকে দিয়েছেন ভালো খেলার তাগিদ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার প্রথম টেস্ট ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শান্ত।
এমন হার কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই হতাশাজনক। পুরো ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে আমরা খুব একটা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। যার কারণে ম্যাচ হারা। অতিরিক্ত আপসেট এটা আসলে বলব না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল। আপসেট, ভালো করিনি এই কারণেই আরকি।
সকালে প্রথম ৫ ওভারে খেলাটা কি জিম্বাবুয়ের হাতে চলে গেছে কি না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার কাছে তাই মনে হয়। আমার মনে হয়েছে আমার আউটটা পুরা ব্যাটিংটা নষ্ট করে ফেলেছে। এই মোমেন্টামটা ওরা পাওয়াতেই আমরা হেরে গেছি।
শেষ দিকে কী একটু আশা ছিল? ওদের উইকেট পড়ছিল… মিরাজ, তাইজুলের বোলিং দেখে কী মনে হচ্ছিল কিছু একটা হতে পারে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: মিরাজ এবং তাইজুল ভাই চেষ্টা করেছে। যেভাবে বল করেছে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে আমার কাছে মনে হয় যে বোর্ডে এনাফ রান ছিল না।
এই ম্যাচে হেরে কি বেশি খারাপ লাগছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: বেশি বলব না। যেকোনো ম্যাচ হারলেই খারাপ লাগে। অবশ্যই আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা খেলতে পারিনি। এটা আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমরা এর থেকে ভালো খেলার মতো দল। অনেক বেশি খারাপ লাগছে ব্যাপারটা এমন না। নরমালি ম্যাচ হারলে যেরকম খারাপ লাগে সেরকম লাগছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের মার্কেট ভেল্যু কমে যাচ্ছে, এ নিয়ে কি আপানারা উদ্বিগ্ন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: দেখেন আমাদের কাজ হলো পারফর্ম করা। খেলা দেখাবে কি দেখাবে না এটা নিয়ে চিন্তা করি নাই। আমাদের কাজ হলো ভালো খেলতে পারা, যেটা আমরা পারছি না।
ট্রু উইকেট, নো হোম এডভান্টেজ ছিল না। এই চ্যালেঞ্জ কি ধরে রাখতে চান?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই। আমার মনে হয় এরকম স্পোর্টিং উইকেটেই খেলা উচিত। উইকেট খুবই ভালো ছিল। ব্যাটারদের জন্য যেরকম সুবিধা ছিল বোলারদের জন্যও টুকটাক সুবিধা ছিল। আমার মনে হয় এখান থেকে আবার পেছনে তাকানোর প্রয়োজন নেই। আমি বিশ্বাস করি আমরা সামনের ম্যাচেও এরকম স্পোর্টিং উইকেটেই খেলব।
আউট হওয়ার আগে ওই সময়টায় আপনার ভাবনা কি ছিল?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার সবসময় রানের জন্য চিন্তা থাকে। স্কোরিং অপারচুনিটি পেলেই, যেভাবে আউট হয়েছি আমার মনে হয় আরেকটু সময় নিতে পারতাম। দিনের দ্বিতীয় বল ছিল। অবশ্যই এই জায়গাতে আরেকটু সময় নিলে বেটার হত। এই শট আমি খেলি। দলের অবস্থা যা ছিল আমার মনে হয় আমি না খেললেও পারতাম।
চাহিদা নেই এখন খুব বেশি, পারফর্ম না করলে সুবিধা কমবে…
নাজমুল হোসেন শান্ত: আপনিই তো উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। আপনি নিজেই বললেন পারফরম্যান্স করেই ভালোটা আসলে তৈরি করতে হবে। এখন পারফরম্যান্স নাই দেখেই ভ্যালুটা একটু কম। নিচের দিকে যাচ্ছে। পারফরম্যান্স যখন আবার ভালো হবে দলের এটা তখন আবার উপরের দিকে যাবে।
চট্টগ্রামে এই উইকেটেই থাকবে কিনা?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার মনে হয় ট্রু উইকেটে খেলা উচিত। ভালো উইকেটে খেলা উচিত। এই ম্যাচ আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। সামনে টেস্ট ম্যাচে ভালো উইকেট থাকলে বোলার এবং ব্যাটার দুজনের জন্যই যেন প্রপার সাহায্য থাকে। ম্যাচ হেরে গেলেই বেশি হোম এডভান্টেজ নেওয়া, আমার কাছে মনে হয় না প্রয়োজন আছে। নির্ভর করে কোন দলের সাথে খেলছি। আমার মনে হয় যে প্রতিপক্ষের সাথে খেলছি, এ ধরনের উইকেটেই খেলা উচিত।
হোমে ভালো খেলি না, বাইরে ভালো খেলি- কেন এমন হচ্ছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: সমস্যা কী আসলে বলা মুশকিল। ব্যাটিং আসলে সফট ডিসমিসাল সবগুলাই। আমার মনে হয় না যে আমরা খুব বেশি ভালো বলে উইকেট দিয়েছি। স্কিলের চেয়ে মেন্টাল বেশি। এখানে আমার মনে হয় যে এখানে আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ব্যাটারদের, যারা আমরা সেট হয়ে আউট হয়েছি।
এখন সুযোগ-সুবিধা বেশি, আর কী করলে ভালো হবে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: বেতন বাড়াতে মনে হয় আপনারা খুশি না?
আমার মনে হয় অনেক দিন পর ম্যাচ ফি বেড়েছে। অবশ্যই সমর্থন করার মত ব্যাপার। আর কী করলে ভালো করব জিনিসটা এমন না। ভালো ক্রিকেট খেলা অনেক জরুরি। দায়িত্ব নিয়ে খেলা জরুরি। আমাদের অবশ্যই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে যে আমরা ভালো করছি না। এখন কীভাবে ভালো করতে হবে সবাই মিলে আলাপ করে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই করতে হবে। সারাদিন কিন্তু মাঠে সবাই কষ্ট করছে। মাঠে এক্সিকিউশনের দিকে অনেক ঘাটতি আছে। যার যা রোল আছে তাকে সেভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
মুশফিকুর রহিম ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ, সামনের মাইলফলকের জন্যই কি তাকে খেলাচ্ছেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। অনেক বছর ধরে খেলছেন। শুধু যে ব্যাটিংয়ে অবদান রাখেন এমন কিন্তু না আসলে। যখন ফিল্ডিং করেন, বিভিন্ন প্ল্যানিং বা এসবের পার্ট থাকে। ব্যাটিং করার সময় সাহায্য করেন ব্যাটারদের। অনুশীলনের সময়ও অনেক কথা হয়। অবশ্যই তার ব্যাটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার মাইলফলক বা অতীতের অভিজ্ঞতা এরকম আমি কিছু চিন্তা করছি না, আআমার মনে হয় উনিও করছে না। উনি চেষ্টা করছে কীভাবে দলে অবদান রাখা যায়। আমি আশা করব সামনে আরেকটা ম্যাচ আছে, ইনশাল্লাহ উনি ঘুরে দাঁড়াবেন। আমি স্টিল আশা ছাড়ছি না। এরকম অনেক সময় গেছে উনার। আবার ফেরতও আসছেন। আমি মনে করি উনি আবার ফিরে আসবেন।
জিম্বাবুয়ের মতো দলের সঙ্গে এভাবে হারার পর দলকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: পেশাদার ক্রিকেটারদের আসলে মোটিভেটেড হতে হবে। আসলে মোটিভেশন দিয়ে খুব বেশি কিছু হয় না। যে যে জায়গায় ভুল করেছে সেগুলো যেন আর ভুল না হয়। আজকের ম্যাচ নিয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন পুরো ম্যাচটা আমি একা হারায়ে দিসি। সত্যি কথা। কারণ সকালে যদি অই আউটেই পুরো খেলা নষ্ট হয়েছে। সেখানে যদি একটা ৫০-৬০ রানের জুটি হত। ২২০+ রান হলে হয়ত ভালো একটা জায়গায় থাকতাম। পুরো ম্যাচে সবার দিকে যেতে চাই না। পুরো দায়ভারটা আমি নিতে চাই। খুব বাজে সময় আমি আউট হয়েছি।
ব্যাটিং লাইনআপ কি জিম্বাবুয়ের বোলিং লাইনআপকে খাটো করে দেখেছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই ভালো বল করেছে। (মুজারাবানি) ওর হাইটের একটা বাড়তি সুবিধা তো থাকেই। স্টিল অই ভালো বল করছি, ব্যাটিং ইউনিটে আরেকটু দায়িত্ব নিতে হত। তার বিপক্ষে আরেকটু ভালো প্ল্যান করা দরকার ছিল। সে তাদের মেইন বোলার ছিল। কীভাবে তার স্পেলগুলো হ্যান্ডেল করতে পারি সেখানে জরুরি ছিল। আমার মনে হয় যেটা আমরা কিছু সময় করেছি কিন্তু লম্বা সময় করতে পারিনি।