প্রতিরোধের নির্দেশ শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগ প্রস্তুত?

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা

দলের কর্মী সমর্থকদের এবার পাল্টা মার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আপনারা অনেক সহ্য করেছেন, আর নয়। আর আমার হুকুমের অপেক্ষায় থাকবেন না। হুকুম যা দেওয়ার দিয়ে দিলাম। এক গালে চড় মারলে আর এক গাল এগিয়ে দেবেন না। পাল্টা কষিয়ে চড় মারবেন।”

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের ফেসবুকে পেজে তা সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়।

সোমবার রাতেও সে রকম একটি ভার্চুয়াল আলোচনা ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই আলোচনাপর্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমস্যার কথা শোনেন আওয়ামী লীগের নেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “এক গালে চর মারলে আরেক গাল পেতে দেওয়ার সময় শেষ। এখন যারা আমাদের ওপর আঘাত করেছে, তাদের জবাব দিতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে। কবে সময় আসবে সেটার জন্য অপেক্ষা করলে হবে না— এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।”

২০০১ সালের ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা তখন সহ্য করেছি, ধৈর্য ধরেছি। দেশটাকে উন্নয়ন করেছি। আজ সেই উন্নয়নও নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমরা আর বসে থাকব না। যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট নেই। দুর্দিনে যারা কাজ করেন, তারাই প্রকৃত নেতা। এখন আর কাউকে হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। আমি হুকুম দিয়েছি— এখনই কাজে নামতে হবে।”

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং নানা প্রতিকূলতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আল্লাহ বারবার আমাকে বাঁচিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার মাধ্যমে কিছু করাতে চান, দেশ ও জাতির কল্যাণেই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছি, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। কিন্তু আবারও সেই উন্নয়ন ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।”

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি জনগণকে বলব— ধৈর্য ধরুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। যেখানে অন্যায় দেখবেন, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এখন বিচার-বিবেচনার সময় নয়, এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করার সময়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে এই দুর্বৃত্ত, খুনি, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ”

শেখ হাসিনার এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ তো বটেই অন্য দলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বছর ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাত মাসের মাথায় হাসিনা আওয়ামী লীগের ফেসবুকে দেশের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি দেশে থাকা আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলছেন, দলের শহীদ নেতা-কর্মীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

তবে প্রকাশ্যে এর আগে পাল্টা মারের কথা বলেননি। যদিও দলের হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে তিনি আরও আগে থেকে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলছিলেন, “যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হোন। আর যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে রাখুন। দিন আসছে, মাঠে নেমে ইউনূস বাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে।”

তবে সেই সভাগুলো প্রকাশ্য ভার্চুয়াল সভা নয়। শুধুমাত্র গ্রুপ সদস্যরাই সেই কথা শুনতে পেয়েছেন। এবার মুখ খুললেন আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের নিয়মিত অনুষ্ঠানে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশের একটি নির্দেশের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেত্রী দলকে শেষ দেখে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের ঢাকার সদর দপ্তর থেকে পুরো দেশে পুলিশ বাহিনীকে পাঠানো নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একপ্রকার নির্বিচারে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দলের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে, ঢাকায় দুশো-আড়াইশো জনকে জড়ো করতে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাটে নজরদারি বাড়াতে এবং তল্লাশি চালাতে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের মোবাইল ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের খবরও প্রকাশ্যে এসেছে।

আরও পড়ুন