কান্নায় যেন কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো তার। থেমে থেমে কথা বলছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল দীর্ঘশ্বাস।
খানিকক্ষণ নীরব থেকে বললেন, “আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই। আপনারাই বিচার করুন।”
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ‘দায়মুক্তি নামে এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জনগণের কাছে আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমি কী অপরাধ করেছি। কেন দেশে আমার মা-বোনেরা স্বামীহারা হচ্ছে। কেন নারীদের উপর নির্যাতন চলছে।”
তিনি বলেন, “মানুষ একদিন ঠিক বিচার করবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।”
একদিন আগেই বুধবার রাতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশাপাশি বুলডোজার চলেছে খুলনায় বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে, কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফের বাড়িতে। বুলডোজার না চললেও ভাংচুর হয়েছে সিলেট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর মুরালে।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার স্বামীর বাড়ি সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয় সেদিন।
ছাত্রলীগের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এসবের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এর বিচারের আকুতি জানান সেদিনও।
বৃহস্পতিবার আবারও বিগত সময়ে বাংলাদেশের জন্য কাজ করার বর্ণনা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “আমি দেশের জন্য কী না করেছি। এই ভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে কেন? তিনি তো নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন এই দেশের জন্য। এই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার এই কি পুরস্কার?”
শেখ হাসিনা বলেন, “কী অপরাধ করেছি আমি? এই দেশ কী ছিল আর কী হয়েছে। কোন কাজটা আমি বাকি রেখেছি?”
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভাঙার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক স্মারক। ওই বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই বাড়িতেই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই মানুষটির বাড়িতে কেন আগুন দেওয়া হল? কেন ভেঙে ফেলা হল?”
এরপর একে একে আওয়ামী লীগের আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের কথা শোনা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার যাত্রবাড়ির এক নারী হাসিনাকে আপা সম্মোধন করে বলেন, গত বছর কীভাবে তার স্বামীকে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করা হয়।
দুই সন্তানের মা ওই নারী বলেন, তার স্বামী বারে বারে মার্জনা চাইলেও দুষ্কৃতরা তাকে ছাড়েনি।
মাগুরার আওয়ামী লীগের এক নারী নেত্রী হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্মোধন করে বলেন, কীভাবে ৫ অগাস্ট বিকালেই তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ওই নারী নেত্রী জানান, ১৪ অগাস্ট চাকরি যায় তার স্বামীর।
শেখ হাসিনাকে তিনি জানান, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন বলেই তার উপর নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে। মিথ্যা মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এই নারী বলেন, জয়বাংলা-র পক্ষে লেখালেখি করেন। এই কারণেই তাকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে গালমন্দ করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
ফ্যাসিবাদী কে? প্রশ্ন শেখ হাসিনার
যোগী রাজ্যের বুলডোজার ইউনূসের বাংলাদেশেও, ধ্বংস বঙ্গবন্ধুর বাড়ি