আওয়ামী লীগ ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা এক অডিও বার্তায় বলেছেন, জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, “ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারীর হাত থেকে দেশকে রক্ষায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
“যে যেখানে আছেন; সকল শ্রেণি-পেশা, দল-মত নির্বিশেষে যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক, সুখী সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠুক, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যারা চান, তাদের সবাইকে আমি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামীকালের কর্মসূচি সফল করা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ইউনূসের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, তাদের বাড়ি-ঘর, দলীয় অফিস কিছুই বাদ যায়নি বিরোধীদের হামলা থেকে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সবই আগুনে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ওপরও আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কারাগারে, কেউ বিদেশে পালিয়ে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আছেন ভারতে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করে বিচার এগিয়ে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই রায় কবে হবে, তার দিন ঠিক হবে ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার।
যদিও এই বিচারকে ‘সাজানো’ আখ্যায়িত করে ইতোমধ্যে জাতিসংঘে নালিশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ১৩ তারিখ লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের থেকে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছে জনগণের শক্তিতে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে গড়ে ওঠা দল নয়। আর অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলকারী বলে দেবে আওয়মী লীগ নিষিদ্ধ আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে? আওয়ামী লীগ এভাবে নিষিদ্ধ হয় না, হবে না।”
চলতি বছরের মে মাসে নজিরবিহীন এক নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি স্থগিত করা হয় নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধন।
মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনকে ’জঙ্গি শাসন’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশকে জঙ্গি শাসন থেকে মুক্ত করবার জন্য সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আমি আহ্বান জানাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের এই কালো মেঘ কেটে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ আবার সুন্দর জীবন ফিরে পাবে।“
জেল, জুলুম ও নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক মানুষকে ওরা হত্যা করেছে। নাম-পরিচয় খুব অল্প লোকেরই পাওয়া গেছে। বাকি অনেকের পাওয়া যায়নি। বহু লাশ বড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ নদীতে ভেসে গেছে। বহু মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
“জেল-জুলুম-অত্যাচার এগুলো তো সীমাহীন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের অসংখ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, “আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আপনারা ভুলে যাবেন না এই বাংলাদেশ আপনাদেরও দেশ।“
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের নির্যাতন ও গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা মেরে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিল, রক্ষা করতে কে গিয়েছিল? আমরাই রক্ষা করতে যেয়ে উল্টো আমরা অভিযুক্ত। আর যারা পুলিশকে হত্যা করল তাদেরকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কে দিয়েছে? ড. ইউনূস ক্ষমতা দখল করে দিয়েছ। তার কারণটা কী? এটা তার পরিকল্পনায় ছিল। এটা মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ।”
পুলিশ হত্যা করে তাদের ‘মোরালিটি’ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিভিল প্রশাসনের একই অবস্থা। এই অবস্থায় কোন দেশ চলতে পারে না। আইনের শাসন নাই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নাই। কথায় কথায় গ্রেপ্তার আর মামলা।”
দেশের চলমান গুম, খুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রতিটি সেক্টর আজ দুর্নীতিতে ভরা। চাঁদাবাজি, মাস্তানি ছাড়া কোন কাজ নাই। টাকা ছাড়া কোন কথা নাই। গোটা বাংলাদেশটাই একটা কারাগার। গোটা বাংলাদেশই হয়ে গেছে একটা জল্লাদখানা। গোটা বাংলাদেশই একটা আয়নাঘর।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা অফিসারদের বিচারের নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেনাবাহিনী ডিসিপ্লিনারি ফোর্স। তাদেরকে যেখানে হুকুম দেবে সেখানেই যাবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাও আবার কী; আইসিটিতে। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যারা রক্ষাকারী তাদের বিচার কীভাবে সেই কোর্টে হবে যেই কোর্টে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার অর্থ কী দাড়াচ্ছে?”
রাজবন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি সেনা, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবি জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি যারা কারাগারে বন্দি তাদের সকলের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি জানান।



