মার্কিন ডিপ স্টেটের ‘টোপ গিলেছিলেন’ হাসিনার তিন মন্ত্রী

সাবেক আওয়ামী লীগের তিন মন্ত্রী সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও এ আরাফাত।
সাবেক আওয়ামী লীগের তিন মন্ত্রী সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও এ আরাফাত।

শেখ হাসিনা সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করেছিল মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’। তাদেরকে এমনভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের স্বার্থবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিশেষকরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের কয়েক সপ্তাহ।

গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পর শেষের দিকে ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাজির করেছেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্টের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চন্দন নন্দী।

বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনীর ভেতরের নানা খবর এর আগেও ফাঁস করেছেন এই ভারতীয় সাংবাদিক। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

তিনি লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ব্যাপক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনার সরকার ও আওয়ামী লীগ কেন ব্যর্থ হয়েছিল, তার উপর চলমান গভীর মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণে বেশ কিছু চরিত্রের সন্দেহজনক ভূমিকার প্রমাণ মিলেছে।

এর মধ্যে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

এই তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে চন্দন নন্দীর দাবি।

তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আট দিনের মাথায় ১৩ অগাস্ট রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করার কথা জানানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট এই দুই মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন সদরঘাট থেকে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল মঞ্চায়ন বা ‘স্টেজড’।

চন্দন নন্দী লিখেছেন, বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন মহল, যার মধ্যে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও রয়েছে, তাদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আরাফাত পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে থাকা যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। ক্ষমতা হারানোর একবছর পরও তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য খুবই অল্প বা কার্যত নেই।

নর্থইস্ট নিউজকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের কিছু সূত্র জানিয়েছেন, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও মোহাম্মদ আরাফাত এমনভাবে কাজ করেছিলেন যা সাধারণভাবে সরকারের এবং বিশেষ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর “স্বার্থবিরোধী” ছিল।

শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিকের পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সূত্রগুলো।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীও, যিনি সালমান এফ রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে অবগত ছিলেন।

সাবেক ওই মন্ত্রীর ভাষায়, ‘দরবেশ’ কার্যত শেখ হাসিনার কাছ থেকে তাদের ‘দূরে সরিয়ে’ রেখেছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নর্থইস্ট নিউজকে বলেছেন, “তারা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশেও ২০২৩ সাল থেকে বা তারও আগে থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সক্রিয় ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছিলেন।”

শেখ হাসিনা সেসময় এ তিনজনকে তার বা সরকারের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার বিষয়ে সন্দেহ না করলেও বর্তমানে তাদের বিষয়ে অবগত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের কিছু সূত্রের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের ‘রেজিম চেঞ্জ’ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। মূলত ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পর, যার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো গদিতে বসেছিলেন।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে এ আরাফাত।

অবশ্য অপর কয়েকটি সূত্রের দাবি, মূলত ২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে যখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের বিষয়ে প্রকাশ্যে সরব হতে শুরু করেন সেসময়ই প্রক্রিয়াটি গতি পায়।

পরে এই প্রক্রিয়ায়ে হাওয়া দেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু।

একটি ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ২০২২ সালের ২ জুনের একটি প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শেখ হাসিনা সরকার পতনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই, ক্রমাগত বাংলাদেশকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে, যখন শেখ হাসিনা শেষবারের মতো সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, হাসিনা এক গোপন বৈঠকে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে তার সরকারের সামনে আসা ছয়টি জটিল বিষয় তুলে ধরেছিলেন। বিষয়গুলির মধ্যে ছিল, বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগদানের প্রস্তাব, জিইএসওএমআইএ (GESOMIA) ও আকসা (ACSA) চুক্তি স্বাক্ষর, মার্কিন কোম্পানিগুলিকে ২৬টি গ্যাস-তেলসমৃদ্ধ ব্লকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট অনুযায়ী মিয়ানমার ইস্যু।

ওই বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, “তিনি (শেখ হাসিনা) হাতের ওপর চিবুক ভর দিয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। তাকে উদ্বিগ্ন ও অশান্ত দেখাচ্ছিল। নিজের সরকারের জন্য হুমকি তিনি স্পষ্টভাবে টের পাচ্ছিলেন।”

“শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নত হতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি সবক’টি গ্যাস-তেলক্ষেত্র মার্কিন কোম্পানির হাতে দিতে চাননি; বরং দুই-তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দিতে আগ্রহী ছিলেন।”

এদিকে, আওয়ামী লীগের ভেতরে নিজের অবস্থান শক্ত করে কার্যত উপ-প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে যাওয়া সালমান এফ রহমান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর বাজপাখির মতো নজর রাখছিলেন।

২০২৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের নেতারা।  

২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে রিটজ কার্লটন হোটেলে উঠলেও সালমান এফ রহমান গিয়েওঠেন সেন্ট রিজিস হোটেলে।

এক সূত্র জানায়, “সেন্ট রিজিস থেকে রিটজ কার্লটন যেতে ২০-৩০ মিনিট লাগে। ওই সময় একটি নতুন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এ বৈঠকে দরবেশের (সালমান এফ রহমান এই নামে সমধিক পরিচিত) পাশাপাশি মোহাম্মদ আরাফাতেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের কক্ষে প্রবেশ করার আগমুহূর্তে আমি দেখি, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত থাকা মার্শা বার্নিকাট সেই কক্ষ থেকে বের হচ্ছেন, যেখানে দরবেশ অবস্থান করছিলেন।”

“বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে দরবেশকে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। প্রথমে বলেন, এটি আলাদা বৈঠক। পরে বলেন, তিনি চাননি তার অতিথিকে অন্যদের সামনে দেখা যাক।”

আগের রাতেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।

সূত্রের উদ্ধৃত করে নর্থইস্ট জানায়, অন্তত ছয়জন মার্কিন নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন উইলিয়াম মিলাম, তৎকালীন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার, একজন দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ এবং বার্নিকাট। তারা নিয়মিত দরবেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

বার্নিকাট এবং আরও দুইজন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ২০২৫ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা চাকরিচ্যুত হন। তখন বার্নিকাট ছিলেন মার্কিন ফরেন সার্ভিসের মহাপরিচালক ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিশ্বব্যাপী মানবসম্পদ নিয়োগ ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন বিভাগের প্রধান।

ওই সূত্র জানান, “ঢাকায় ফেরার পর দরবেশ আরাফাতের মাধ্যমে বার্তা পাঠান যে নতুন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের আর কোনো প্রয়োজন নেই।” যার ফলে দীর্ঘ প্রস্তুতিমূলক কাজ ভেস্তে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরের একটি সফরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সূত্রটি জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রে সালমান এফ রহমানের সর্বশেষ বৈঠকটি ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষদিকে। তখন তার বৈঠক হয় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর সিভিলিয়ান সিকিউরিটি, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস উজরা জেয়ার সঙ্গে।

নর্থইস্ট নিউজ লিখেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য এবং ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সমস্য গ্রেগরি ওয়েলডন মিকসের চিফ অব স্টাফ নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে বলেছিলেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে’ বাংলাদেশে কোনো ‘বড় ঘটনা’ ঘটতে পারে।

একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে চন্দন নন্দী জানিয়েছেন, তবু শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস খুব কমই পেয়েছিলেন।

সূত্রের ভাষ্য, “কয়েক মাস আগে (২০২৫ সালে) আমি তার সঙ্গে বিস্তারিত শেয়ার করার সুযোগ পাই। ষড়যন্ত্রের পরিধি ব্যাখ্যা করার সময় হাসিনার মুখের পেশি শক্ত হয়ে ওঠে। তিনি তখন আমাকে লিখিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলেন।”

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে ও শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে ওঠে। সে সময় ছাত্র আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছিল। প্রথম ধাপে (১৬-২০ জুলাই) কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। দ্বিতীয় ধাপ (৪-৬ আগস্ট) আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

একটি সূত্র জানায়, “একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আরাফাত বলেছিলেন, সরকারের কাছে ছাত্র আন্দোলন মোকাবেলায় যথেষ্ট গুলি আছে। এ মন্তব্য পরিস্থিতিকে ভয়াবহভাবে উত্তেজিত করে তোলে।”

“এটি বোকামি নয়, ইচ্ছাকৃত কাজ,” দাবি করেন আওয়ামী লীগের ওই সূত্রটি।

“৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরে একটি বৈঠক ডাকেন। তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং ডিজিএফআই ও এনএসআই মহাপরিচালকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জিজ্ঞেস করেন- পুলিশ কী করবে। জেনারেল জবাব দেন- চিন্তা করবেন না, সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেবে।”

হাসিনার কাছে তখন তাকে বরখাস্ত করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তিনি তা করেননি।

আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও তখন এক ধরনের অস্থিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে ছিল, কিংবা অদৃশ্য শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। জুলাই মাসের কর্মসূচিতে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে শোক মিছিল আয়োজনের কথা ছিল। তাছাড়া, প্রায় ৪-৫ লাখ কর্মী-সমর্থককে ঢাকায় আনার পরিকল্পনাও ছিল। তাদের রাখার কথা ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

৩০ জুলাই, ছাত্র আন্দোলন আরও বেগবান হবে বুঝতে পেরে সালমান এফ রহমান শেখ রেহানাকে যুক্তরাজ্য থেকে দ্রুত ঢাকায় ফেরার তাগাদা দেন।

তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন যে, কোনো রকম রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে আওয়ামী লীগের সমাবেশ বাতিল করতে হবে। সমাবেশ বাতিলের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ওপর।

শেখ হাসিনার “একাকীত্বের” অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় ২০২৪ সালের ৮-১০ জুলাইয়ের “বিপর্যয়কর” চীন সফর।

সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, যখন দলীয় নেতারা সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, তখন শেখ রেহানা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “যা বলা হয়েছে তাই করুন।”

শেষ পর্যন্ত ওই সমাবেশ বাতিল করা হয়। এর ফলে ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্রশিবির, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ কার্যকর শক্তি গড়ে তোলার সুযোগ হারায়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ঢাকা ছেড়ে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এক বছর পেরিয়েছে, কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতারা এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ বলে নর্থইস্টকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের ওই সূত্র।

সূত্রটি জানিয়েছে, “তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারে থাকাকালে দল কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। সংগঠনের পক্ষে সবকিছু ভালো চললেও তারা কোনো বিষয়েই খোলাখুলি মত প্রকাশের সুযোগ পাননি, না দলীয় বিষয়ে, না সরকারের বিষয়ে। ফলে সৎ সমালোচনা বা মূল্যায়নের পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল এই ভয়ে যে, মত প্রকাশ করলে তারা দল বা সরকারের পদ হারাতে পারেন।”

এখন দলীয় সূত্রগুলো মনে করছে, যদিও মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল, শেখ হাসিনার “একাকীত্বের” অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় ২০২৪ সালের ৮-১০ জুলাইয়ের “বিপর্যয়কর” চীন সফর।

তিনি নির্ধারিত সময়ের অন্তত এক দিন আগেই দেশে ফিরে আসেন, যা স্পষ্ট করে যে সফর পরিকল্পনা অনুযায়ী সফল হয়নি।

আওয়ামী লীগ সূত্রের মতে, এর ফলে ভারতও বিরক্ত হয়েছিল। তাদের ভাষ্য, “চীন সফর ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি ভুল কৌশলগত সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads