নির্বাসনেও অটল শেখ হাসিনা, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে

সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।

নয়া দিল্লির গোপন স্থানে বসে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যখন এই সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তখন এপারে চলছে তার বিরুদ্ধে হওয়া কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের প্রস্তুতি। দেশের গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতার মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশে চলমান সংকটের একটি অকপট বিবরণ তুলে ধরেন। সেইসাথে তার দলের নিষিদ্ধ হওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ কীভাবে ‘চরমপন্থী’ সমর্থিত একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে পড়লো সে বর্ণনাও তুলে ধরেন।

আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে নির্বাসনে যাওয়া শেখ হাসিনার কণ্ঠে ঝরেছে নিজের নির্বাসন, দেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে ঘিরে থাকা দুর্ভাবনার বিষয়।

ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া সমালোচনাও করেছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট দিন দিনকে ঘনীভূত হচ্ছে, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নজিরবিহীনভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

রাত পোহালেই তারু বিরুদ্ধে ঘোষিত হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হওয়া মামলার রায়। তার দল আওয়ামী লীগ এই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ আখ্যা দিয়ে দেশব্যাপী ‘লকডাউনের’ ডাক দিয়েছে।

মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য কথিত নির্বাচন কখনওই অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা সেখানে আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি অনির্বাচিত সরকারের তৈরি অসাংবিধানিক জুলাই সনদের ভিত্তিতে, যেখানে লাখ লাখ ভোটারের নাগরিক অধিকার উপেক্ষা করা হয়েছে।

“যে নির্বাচন আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে আয়োজন করা হবে, সেটি কখনওই বৈধ হতে পারে না। এমনটা হলে জনমতের ভিত্তিতে দেশ চালানোর সুযোগ হাতছাড়া করবে দেশের মানুষ।”

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে মোট নয় বার নির্বাচিত হওয়া একটি দল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছিল বলেও তার দাবি।

বললেন- ‘ক্ষমতা চাই না’

দেশে ফেরার পরিকল্পনা আছে কি না ইন্ডিয়া টুডের এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দল অংশ নিতে পারবে এমন একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণতন্ত্র ফেরত’ এলেই কেবল তিনি দেশে ফিরবেন।

তার ভাষায়, “আমার উদ্দেশ্য ক্ষমতা নয়। আমি আমাকে বা আমার পরিবারকে নিয়েও কখনও ভাবিনি। বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের নাগরিকেরা যেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।”

শেখ হাসিনা জানান, তার দুশ্চিন্তার বিষয় হলো দেশের মানুষের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও শক্তিশালী করা এবং রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা।

চব্বিশের ব্যর্থতা প্রসঙ্গ

কিছুটা আত্মসমালোচনার সুরেই জুলাই আন্দোলন মোকাবেলায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন শেখ হাসিনা।

জুলাই অভ্যুত্থানের পরের দৃশ্য।

তিনি বলেন, “ঘটনাগুলো ভিন্নও হতে পারতো। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যেত।”

আন্দোলনের প্রথম পর্বেই হতাহতের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন করার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

“ইউনূস ক্ষমতা দখল করার পর সেই গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিচালিত তথাকথিত তদন্ত শুধুই দায় চাপানোর অজুহাত,” ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন তিনি।

আওয়মী লীগ সরকারের আমলে অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত সাফল্য, উন্নত বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং দারিদ্র্য কমানোর সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশের উন্নয়নকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলাম।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বিচারে আটক, দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং গণমাধ্যমকে নজিরবিহীনভাবে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads