সুইডেনে একটি শিক্ষাকেন্দ্রে বন্দুকধারীর গুলিতে ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ওই বন্ধুকধারীও রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে স্টকহোমের ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে ওরেব্রো শহরে রিসবার্গস্কা স্কুলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসন রিসবার্গস্কা স্কুলের হামলাকে ‘সুইডিশ ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
পুলিশ বলছে, বন্দুকধারী একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তাদের ধারণা। অবশ্য কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস্টারসন বলেন, “আজ যা ঘটে গেল তা এককথায় মেনে নেওয়া কঠিন।”
পুলিশ আগেই জানিয়েছিল যে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে কারণ আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে চারজনের অস্ত্রোপচার লেগেছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলেছিল পাঁচজনকে গুলি করা হয়েছে, এবং ঘটনাটি হত্যার চেষ্টা, অগ্নিসংযোগ এবং একটি গুরুতর অস্ত্র অপরাধ হিসাবে তারা তদন্ত করছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমে পরে খবর আসতে শুরু করে যে আহতদের মধ্যে আরও কয়েকজন মারা গেছে।
স্থানীয় সময় ১২:৩৩ টায় (১১:৪৪ জিএমটি) রিসবার্গস্কা স্কুলে গুলি চালানোর খবর পায় পুলিশ। প্রাপ্তবয়স্কদের ওই শিক্ষাকেন্দ্রে আরও বেশ কিছু স্কুল রয়েছে।
সাধারণত যারা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করেনি তারাই এই ধরনের স্কুলে পড়াশোনা করে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত আইনমন্ত্রী এ ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি তিনি আশ্বস্ত করেন যে, বুধবার দেশের স্কুলগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।
আইনমন্ত্রী গুনার স্ট্রোমার বলেন,তিনি কখনও স্কুলে এই মাত্রার গুলি বর্ষণের ঘটনা দেখেননি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গুলিতে আহত রোগীদের সুবিধার্থে আশেপাশের হাসপাতালে জরুরি কক্ষ এবং নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ওরেব্রো বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ পাঁচজনকে তাদের জরুরি কক্ষে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও একজনকে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা।
ওরেব্রো কাউন্টির পৌরসভা জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে কোনো শিশু নেই।
শিক্ষিকা লেনা ওয়ারেনমার্ক সুইডিশ পাবলিক রেডিও এসভিটিকে বলেন, তিনি তার ক্লাস রুমের কাছে অন্তত ১০টি গুলির শব্দ শুনেছেন।
হামলার সময় স্কুলে থাকা এক স্বজনদের জন্য হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন আলি এল মোকাদ।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, “সত্যি বলতে খুব একটা ভালো লাগছে না।”
তিনি জানান, তার চাচাতো ভাইয়ের এক বন্ধু ওই ঘটনার সময় সেখানে ছিল। তিনি তাকে ফোন করেছিলেন। তার সেই বন্ধু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদছিল।
“তার সেই বন্ধু যা দেখেছে তা এককথায় ভয়াবহ বলে মনে হয়েছে। তিনি কেবল মেঝেতে পড়ে থাকা মানুষ, আহত এবং সর্বত্র রক্ত দেখতে পেয়েছিলেন।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, স্কুলের একজন ছাত্রী যার নামের প্রথম অংশ মারওয়া, বিবিসিকে বলেন, তারা কয়েকজন মিলে একজনের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
“আমার পাশে থাকা একজনের কাঁধে গুলি লেগেছে। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি যখন পিছনে তাকালাম তখন দেখলাম মেঝেতে তিনজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে”
মারওয়া এবং তার আরেক বন্ধু রক্তাক্ত আরেকজনকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন যেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ না হয়।