স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও চিপসহ কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে ‘পাল্টা’ শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং বর্ডার পেট্রোল একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বেশিরভাগ দেশের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত ১০ শতাংশ বৈশ্বিক শুল্ক থেকে এই পণ্যগুলো অব্যাহতি পাবে। এ ছাড়া চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও এসব পণ্য দেশটির ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাবে।
এর মধ্য দিয়ে চীনের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এই প্রথম দেশটি থেকে কোনো পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে বর্ণনা করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।
শনিবার মিয়ামি ভ্রমণের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতে তিনি এই শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাবেন।
তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দেব। তবে আমরা (শুল্ক বাবদ) প্রচুর অর্থ পাচ্ছি। একটি দেশ হিসেবে আমরা প্রচুর অর্থ পাচ্ছি।”
তবে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অন পলিসি স্টিফেন মিলার এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, চীনের ওপর নতুন করে আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে এসব এই ইলেকট্রনিক পণ্য অব্যাহতি পেলেও আগে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বের অনেক দেশের মতো চীনের পণ্যেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। সে সময় দেশটির ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানান ট্রাম্প। এতে আগে থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক থাকায় চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ।
পরে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক হার বাড়ায়, যা ধাপে ধাপে বেড়ে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছায়। আর চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। এখন যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার ও মোবাইলসহ কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যে নতুন আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্ক অব্যাহতি দিলেও আগে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত থাকছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উদ্বেগের পর ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক অব্যাহতির পদক্ষেপ এলো। বেশিরভাগ গ্যাজেট চীনে তৈরি হওয়ায় বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসব পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং বর্ডার পেট্রোলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্মার্টফোন ও কম্পিউটারসহ কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমদানিতে দেওয়া শুল্ক ছাড় গত ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব পণ্যের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল ও মেমরি কার্ডও অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়ে ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি গবেষণার বৈশ্বিক প্রধান ড্যান আইভস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি স্বপ্নের পরিস্থিতি। চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক থেকে স্মার্টফোন, চিপ বাদ দেওয়া একটি গেম-চেঞ্জার পরিস্থিতি।”
তার মতে, অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বৃহত্তর প্রযুক্তি শিল্প এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, সংস্থাগুলোর উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে সরানোর জন্য আরও সময় দেওয়ার লক্ষ্যে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আমেরিকা সেমিকন্ডাক্টর, চিপ, স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি উৎপাদনের জন্য চীনের উপর নির্ভর করতে পারে না।”
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্টের নির্দেশে, এই সংস্থাগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন স্থানান্তরিত করার জন্য তৎপর হচ্ছে।”
এর আগে ফ্লোরিডার বাড়িতে অবস্থানকালে শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, চীনের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পর তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে তার সম্পর্কের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এর থেকে ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে আসবে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া না হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একটি আইফোনের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য অ্যাপলের আইফোনের প্রায় ৮০ শতাংশই তৈরি হয় চীনে, বাকি ২০ শতাংশ ভারতে তৈরি হয়।