‘ইতিহাস লিখে রাখবে ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে গণহত‍্যা হয়েছিলো’

আশরাফুল আলম খোকন।
আশরাফুল আলম খোকন।

আশরাফুল আলম খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র। ছাত্রজীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পেশাগত জীবনে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন, চ্যানেল আই-এ দীর্ঘ সময় কাজের পর ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিবের দায়িত্ব পান। প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে সমসাময়িক বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন খোকন। ফেইসবুকে লেখা তার সর্বশেষ পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো।

১৬ জুলাই, রাষ্ট্রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে গোপালগঞ্জে সংঘটিত হলো একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা। কেন বলছি পরিকল্পিত? কয়েকটা বিষয় দেখলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবেন।

প্রথমেই- একটা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে: সরকারের দুই উপদেষ্টা কন্ট্রোল রুমে বসে সিসিটিভি মনিটরে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি দেখছেন। মানে, গোপালগঞ্জ আগে থেকেই তাদের নজরদারির আওতায় ছিল।

এনসিপি তাদের আগের সফরের নাম দিয়েছিল ‘পদযাত্রা’- আর গোপালগঞ্জে এসে নাম দিলো ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। রাজনৈতিক অর্থ কী? ‘মার্চ টু’ মানে দখলে যাওয়া।

সরকার সমর্থক প্রচারযন্ত্ররা আগে থেকেই গল্প সাজাল- টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার ভাঙা হবে, ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনার মতো।

এটা ছিল একটা রাজনৈতিক দলের সভা- সেখানে রাষ্ট্রের টাকায়, অস্ত্রে, সেনা-পুলিশ নিয়ে পুরো শক্তি নামানো হলো কেন?

যারা প্রতিবাদকারী ছিল, তাদের কাছে কোনো স্নাইপার ছিল না, একে-৪৭ ছিল না- তাহলে সেনাবাহিনী কেন গুলি চালালো?

ভিডিওতে দেখা গেলো, রমজান কাজী সুস্থ অবস্থায় সেনাবাহিনী আর পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইছে- কিছুক্ষণ পরেই পাওয়া গেলো তার গুলিবিদ্ধ লাশ!

প্রশ্ন হলো, গত জুলাইতে সরকারি স্থাপনা জ্বালানো, পুলিশ হত্যা- সবই হলো, কিন্তু তখন সেনাবাহিনী গুলি চালায়নি। কাল কেন করলো? কার বিরুদ্ধে?

এনসিপির কোনো শীর্ষ নেতা আহত হয়নি। কোনো পুলিশ নিহত হয়নি। তাহলে এই রক্ত ঝরানো হলো কার স্বার্থে?

যদি পুলিশ হত্যা করলে দায় হয় শেখ হাসিনার- তাহলে এই গণহত্যার নির্দেশ দিলো কে? এখানে তো প্রতিবাদকারীরা কাউকে হত্যা করেনি!

সরকার বলছে, এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিচার হবে। প্রশ্ন হলো- কার বিচার হবে? যারা গুলিতে মরেছে, তাদের? নাকি যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের?

গত তিন দশকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর গুলিতে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মী এভাবে মারা যায়নি। শেখ হাসিনার সময় সেনাবাহিনী তাদের ভূমিকাতেই ছিল- আর ইউনুস সরকার আজ তাদের নামিয়েছে পুলিশ আর আনসারের পর্যায়ে!

আরো অদ্ভুত- একটি দলের সব নেতা সেনাবাহিনীর এপিসির ভেতরে বসে পালিয়ে গেছে! ট্যাংকের ভেতরে গরম লেগেছে, না শরম লেগেছে?

এনসিপি বলছে, তারা যুদ্ধ ঘোষণা করবে- কার বিরুদ্ধে? দেশের জনগণের বিরুদ্ধে? কারণ সরকার তো তাদের নিজেদেরই!

সবচেয়ে ভয়াবহ দিক- ১৬ জুলাই ছিল তাদেরই সহকর্মী শিবির নেতা সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী, আর ওরা সেটা জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করলো। অথচ কোনো কবর জেয়ারত, দোয়া মাহফিল নেই- গেছে গোপালগঞ্জ দখল করতে!

এমন বহু প্রশ্ন আছে- উত্তর মিলবে না, উত্তর কেউ দিতে চাইবেও না। কিন্তু ইতিহাস লিখে রাখবে, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে গণহত‍্যা হয়েছিলো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads