ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে রিটকারী ছাত্রীকে ফেসবুক পোস্টে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে এক ‘শিবিরকর্মীর’ বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
‘হুমকিদাতা শিবিরের কেউ নয়’ এমন দাবি করলেও ফেইসবুকে ভেসে বেড়ানো ছবিতে ওই শিক্ষার্থীকে সংগঠনটির কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
এর মধ্যেই ওই শিক্ষার্থীর বিচারের দাবি জানিয়ে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ছাত্রশিবির।
সোমবার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেওয়ার পর ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে হুমকি দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আলী হুসেন।
তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’
ওই শিক্ষার্থী পরে একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলেও দাবি করেছেন। তবে তার ফেসবুকের পূর্বের পোস্টগুলোতে জামায়াতের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেসময় তিনি ফেসবুক কমেন্টে নিজেকে শিবির সমর্থক বলে পরিচয় দিয়েছেন।
রিটকারী ওই ছাত্রী বি এম ফাহমিদা আলম তিন বামসংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী।

সোমবার সকালে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা বলেন, এস এম ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার পদত্যাগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগে জড়িত থাকায় তার প্রার্থিতা নিয়ে তিনি অভিযোগ আনেন।
এস এম ফরহাদের সাথে ব্যক্তিগত কোনো বিরোধিতার জায়গা থেকে এই রিট করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি এখন আদালতেই মীমাংসা হবে। কিন্তু এই রিট করার পর থেকে আমি নানা রকম বট অ্যাকাউন্ট থেকে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি।
গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া ওই শিক্ষার্থীর এমন পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্যানেল থেকে এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন লেখেন, “আমরা একটা সহনশীল ক্যাম্পাস নির্মাণে কাজ করছি। অথচ ক্যাম্পাসের একটা মেয়েকে রাজনৈতিক কারণে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। এই ছেলেকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, “গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে দেওয়া হবে না।”
এস এম ফরহাদ অবশ্য দাবি করেছেন ওই শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়।
তিনি বলেন, “যারা এটার সঙ্গে জড়িয়ে ছাত্রশিবির নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন তিনি।”
আলী হুসেনের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান ফরহাদ।
এদিকে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির প্রার্থিতা নিয়ে রিট আবেদনকারীকে শিবির নেতা কর্তৃক প্রকাশ্য গণধর্ষণের হুমকি ও সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও নাছির উদ্দিন কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।