অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার পর যিনি এসিডভর্তি বাথটাবে ডুবিয়ে আলামত নষ্টের চেষ্টা করেছিলেন সেই মিরাজ জাফরের ২১ বছর ছয় মাসের সাজা হয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে নর্থ প্যারামাট্টা ইউনিটে আরনিমা হায়াতের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গেল মে মাসেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন মিরাজ জাফর।
এর প্রায় সাত মাস পর বৃহস্পতিবার সিডনিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডেবোরাহ সুইনি সাজার মাত্রা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরনিমা ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আরনিমার বাবা মুন্সিগঞ্জের আবু হায়াত ও মা মাহাফুজা হায়াত ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হন।
এই হত্যাকাণ্ড এবং সাজা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে বৃহস্পতিবার।
এবিসি নিউজ এক প্রতিবেদনে পাঠককে ‘সতর্ক করে’ রোহমর্ষক বর্ণনা দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের। সঙ্গে লিখে দিয়েছে: এই প্রতিবেদনের বিশদ বর্ণনায় কেউ কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।
রায় ঘোষণার আগে ২৩ বছর বয়সী মিরাজ জাফরকে ভার্চ্যুয়ালি আদালতে হাজির করা হয়। সাজা ঘোষণার সময় তাকে মাথায় হাত দিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওদিকে রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরনিমার বাবা-মা। বাবা আবু হায়াত তখন হত্যাকারীর উদ্দেশে বলতে থাকে, ‘তুমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছ, আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছ, আমার পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছ।’
বাবা-মায়ের অমতে মিরাজ জাফরকে বিয়ে করেছিলেন আরনিমা হায়াত, যা নিয়ে তিনি নিজেও অনুতপ্ত ছিলেন।
আদালত আরনিমার বন্ধুদের সাক্ষ্য নিয়ে জেনেছে, হত্যার আগ পর্যন্ত তার স্বামী আরনিমার উপর নানাভাবে নির্যাতন চালাতো। তিনি বন্ধুদের এসব জানালেও পুলিশের কাছে কখনও নালিশ করেননি।
২০২১ সালে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে মিরাজ বলেছিলো- ‘আমি তোমাকে মেরে ফেলবো’, যা আরনিমার বাবার কানে পৌঁছুলে তিনি পুলিশকে অবহিত করেন। এ নিয়ে পরবর্তীতে মিরাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিলো।
মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে আরনিমা তার এক বন্ধুকে টেক্সট পাঠিয়ে বলেছিলো- ‘তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই।’ ফিরতি বার্তায় ওই বন্ধু তাকে উত্তর দেয়- ‘তোমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই, তোমাকে তার সঙ্গেই থাকতে হবে।’
বিচারপতি সুইনি বলেন, পরের দিনই মিরাজ শ্বাসরোধ করে আরনিমাকে হত্যা করে ।
তারপর তিনি ২০ লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড কিনে আনেন, যা আরনিমাকে ফেলে রাখা বাথটাবে ঢেলে দিয়েছিলেন মিরাজ। তার উদ্দেশ্য ছিল এসিড দিয়ে তিনি আলামত নষ্ট করে ফেলবেন।
বিচারপতি আরও বলেন, মিরাজ এরপর কয়েকবার গুগলে খোঁজ করেছেন- ‘হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ত্বকের ভেতরে পোড়াতে পারে কিনা?’ এরপর তিনি আরও বেশি পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিয়ে আসেন।
মৃত্যুর সময় আরনিমা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং তার পরিচয় সনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত করতে হয়েছে।
মিরাজ তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তিন শূন্যতে ফোন করে বলেন যে, তার ছেলে ও স্ত্রীর মধ্যে ভয়ঙ্কর মাত্রার মারামারি হয়েছে, এখন সে (আরনিমা) নিঃশ্বাস নিচ্ছে না।
পুলিশ সেখানে পৌঁছানোর আগেই মিরাজ পালিয়ে যায়। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে কর্মকর্তারা সেখানে ঝাঁঝালো রাসায়ানিকের গন্ধ পান। পরে বাথটাব থেকে আরনিমার এসিডে পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়।
মিরাজকে ২১ বছর ছয় মাস সাজা দেওয়ার পাশাপাশি আদালত বলেছে, প্যারোলে মুক্তির উপযুক্ত হতে তাকে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তার মানে ২০৩৮ সাল পর্যন্ত একটানা সাজা ভোগ করতে হবে তাকে।