তারেক রহমানের ফেরার ‘পাকা কথা’ দিলেন ফখরুল, আসছেন ২৫ ডিসেম্বর

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডনে বসে পরিচালনা করছেন তার বাবার দল। ছবি: এএফপি
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডনে বসে পরিচালনা করছেন তার বাবার দল। ছবি: এএফপি

আগেও বেশ কয়েকবার পাকা কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবার নতুন করে ‘২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসছেন’ বলে জানিয়েছেন তার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আমাদের সংগ্রামী নেতা, এই দেশের গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ, জনাব তারেক রহমান, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিনি আগামী ২৫শে ডিসেম্বর, আমি আবার রিপিট করছি যে আগামী ২৫শে ডিসেম্বর তিনি ঢাকার মাটিতে আমাদের মাঝে এসে পৌঁছবেন।”

ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমানের ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়। বাধা ছিল তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলার অভিযোগে থাকা কয়েকটি মামলা ও কারা দণ্ডাদেশ।

ইতোমধ্যে মামলার পাশাপাশি সাজাও বাতিল হয়ে গেছে; তারপরও কেন তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না, এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল বিএনপির কর্মীদের মনেও।

বিএনপি নেতারা অবশ্য আশ্বস্ত করছিলেন, যথাসময়ে ফিরবেন তাদের দলের কাণ্ডারী। কিন্তু কেন ফিরছেন না? সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন ঠারে ঠোরে।

গত অক্টোবরের শেষে বিএনপি জানিয়েছিল, তারেক রহমান নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে তারা আশা করছে। কিন্তু নভেম্বরে তিনি ফেরেননি।

নভেম্বরে শেষ দিকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি ও তার শারীরিক অবস্থার অবনতির পরও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল।

ওই সময় ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে তারেক রহমান বলেছিলেন, মায়ের অসুস্থতার মধ্যেও তার দেশে ফেরার বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর হাতে তারা নির্যাতিত হয়েছিলেন, এমন অভিযোগও ওঠে।

পরের বছর সমঝোতার ভিত্তিতে তারেক রহমান কারামুক্ত হওয়ার পরপরই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। তারপর আর ফেরেননি।

আরাফাতও বিদেশে চলে যান, মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় কয়েকবছর পর তার মৃত্যু ঘটে সেখানেই।

বলা হয়, রাজনীতি না করার শর্তে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন তারেক রহমান। ভাই মারা যাওয়ার পরও দেশে ফেরেননি তিনি। মা দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে গেলেও তা তাকে দেশে ফেরাতে পারেনি।

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার সময় বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশে যাবেন, আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ফিরবেন।

কিন্তু এবছরের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়া লন্ডন গেলেও তারেক ফেরেননি। পাঁচ মাস পর খালেদা ফেরেন পূত্রবধূ জোবাইদা রহমানকে নিয়ে। জোবাইদার নিরাপত্তার জন্য কড়া বন্দোবস্তু নিতে তখন বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল।

জোবাইদা লন্ডনে ফিরেও গেছেন। কিন্তু তারেক আসেননি আর। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত সপ্তাহে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর সম্প্রতি তার অবস্থার বেশ অবনতি ঘটে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন, এমন কথা বিএনপি নেতারা জানানোর পর ধারণা করা হয়েছিল, মাকে দেখতে এবার দেশে ফিরবেন তারেক।

কিন্তু ফেইসবুকে এক পোস্টে তিনি ধারণা দেন, তার দেশে ফেরা আপাতত হচ্ছে না। কারণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

তিনি লেখেন, “এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনো সন্তানের মতো আমারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।”

প্রতিবন্ধতা কোন দিক থেকে সেই বিষয় স্পষ্ট না করে লেখেন, “স্পর্শকাতর সেই বিষয় বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।”

তবে এর পেছনে রাজনৈতিক বাস্তবতা থাকার কথা বলেন তিনি। আর তা বদলালেই কেবল তার দেশে ফেরা হবে, তাও তিনি জানান।

শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি নামে এক নেতার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে যখন চারদিকে শোরগোল, তখন তারেক রহমানের ফেরার দিনক্ষণ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম কি মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে চাইছেন- এমন প্রশ্নও তাৎক্ষণিক তুলেছেন কেউ কেউ।

ফখরুল বলেছেন, “আমরা দলের পক্ষ থেকে সকলের পক্ষ থেকে আমরা তার আগমনকে শুধু স্বাগত নয়, আমরা আনন্দের সঙ্গে সমগ্র জাতিকে জানাতে চাইছি।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন