৭ উইকেট নিয়ে তাসকিনের ইতিহাস

সাত উইকেট নিয়ে তাসকিনের রেকর্ড।
সাত উইকেট নিয়ে তাসকিনের রেকর্ড।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর যেখানে শেষ করেছিলেন, বিপিএল যেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন তাসকিন আহমেদ। নতুন বছরে বরং আরও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে অভিজ্ঞ এই পেসারকে। রেকর্ড বইয়ে এক গাদা নতুন পাতায় নিজের নাম লিখিয়ে করলেন ক‍্যারিয়ার সেরা বোলিং। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে, বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে, বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে নিলেন কোনো টি-টোয়েন্টি ম‍্যাচে ৭ উইকেট!

দুর্বার রাজশাহীর হয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে অনন‍্য এই পারফরম্যান্স উপহার দেন তাসকিন। তার বোলিং ৪ ওভারে ১৯ রানে নেন ৭ উইকেট।

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে ৭ উইকেট নিতে পেরেছেন কেবল আর দুই জন বোলার।

গত বছর চীনের বিপক্ষে ৮ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়েন মালয়েশিয়ার পেসার সিয়াজরুল ইদ্রুস। এর আগে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে লেস্টারশায়ারের হয়ে বার্মিংহ্যাম বিয়ার্সের বিপক্ষে ১৮ রানে ৭ উইকেট নেন কলিন আকারম্যান।

নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়ার অ‍ভ‍্যাস এই ম‍্যাচেও ধরে রেখেছেন তাসকিন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে দারুণ এক ডেলিভারিতে শূন‍্য রানেই থামিয়েছেন লিটন দাসকে। পরের ওভারে বিদায় করেছেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানকে।

তাসকিন আবার আক্রমণে ফেরেন সপ্তদশ ওভারে।

প্রথম বলেই তিনি নেন শাহাদাত হোসেনের উইকেট। পরে চতুরঙ্গা ডি সিলভাকেও ফেরান তাসকিন।

শেষ ওভারে ফিরে আলাউদ্দিন বাবুকে আউট করে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বার তিনি নেন ৫ উইকেট। ২০১৬ বিপিএলেই সেই সময়ের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে তার ৫ উইকেট ছিল ৩১ রানে।

পরের বলে মুকিদুল ইসলামকে বোল্ড করেন তাসকিন। তার হ‍্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। পরের বলেই শুভম রঞ্জনকে ফেরান তাসকিন। হয়ে যায় বিপিএলে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।

২০২০ সালে খুলনা টাইগার্সের হয়ে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে মোহাম্মদ আমিরের ১৭ রানে ৬ উইকেট ছিল আগের সেরা।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বিপিএলে সেরা বোলিং ছিল গত আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে আবু হায়দারের ১২ রানে ৫ উইকেট। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ছিল সাকিব আল হাসানের। ২০১৩ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বারবাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে ৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

৭ উইকেটের জয়ে ম‍্যাচ সেরা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন বললেন, এই অর্জনের গুরুত্ব তিনি জানেন।

“ফাইফার (৫ উইকেট) তো যে কোনো সংস্করণেই অনেক স্পেশাল। কারণ অনেকবার ৩-৪ উইকেট পেয়েছি। কিন্তু একটু ভাগ্যও লাগে ৫ উইকেট পেতে। আমার জন্য এটা বড় পাওয়া। যেহেতু আমি বাংলাদেশের ছেলে, বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে খেলা ছাড়ার পরও, এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার।”

“(এমন কিছু ভেবেছি কি না?) হ্যাঁ ভেবেছি…! আসলে না ভাবলে হতো না (হাসি)। তবে উইকেট পেতে ভাগ্যও পাশে থাকতে হয়। কিন্তু আমি খুশি যে, বোলিংয়ে যেটা করতে চেয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভালো বোলিং করতে পারাই গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট তো অনেক সময় কম-বেশি হয়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।”

বিপিএলে রেকর্ড গড়লেন তাসকিন!

শেষ বলে আরেকটি উইকেট পেলে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতেন তাসকিন। কিন্তু সেই সময়ে উইকেটের চেয়ে দলের কথাই বেশি ভেবেছেন এই পেসার।

“আসলে লোভে যাই নাই (হাসি)। বেশি লোভে গেলে হাফভলি হয়ে চারও হয়ে যেতে পারত। আমি একটি একটি বল ধরে এগোচ্ছিলাম এবং নিজের ভাবনায় স্বচ্ছ ছিলাম যে কী করা দরকার। ভালো লেগেছে যে, যখনই অধিনায়ক আমাকে ভরসা করে দায়িত্ব দিয়েছে, ব্রেক থ্রু দিতে পেরেছি।”

বললেন সবচেয়ে ভালো লাগার উইকেটের কথাও।

“প্রথমটি, যেটিতে লিটন আউট হলো। আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি ছিল, যে কোনো ব্যাটসম্যানেরই ওখানে ব্যাট পেতে দিতে হতো এবং (কোনায় লেগে) নিয়ে গেছে। এরকম উইকেটে বল ক্যারি করলে ফাস্ট বোলারদের ভালো লাগে এবং বাংলাদেশের উইকেটে এমন ক্যারি করছে মানে ভালো ব্যাপার।”

গত বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০ ম্যাচে ৬৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। বাংলাদেশের কোনো পেসারের জন্য যা এক পঞ্জিকাবর্ষে রেকর্ড। নতুন বছরের শুরুটাও তার দারুণ হলো বিপিএলে। দুই ম‍্যাচেই হয়ে গেল ১০ উইকেট।

আরও পড়ুন