বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী’ ও ‘জিহাদি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক’ হিসাবে আখ্যায়িত করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে উদ্দেশ করে খোলা চিঠি লিখেছেন তসলিমা নাসরিন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা চিঠিতে ইউনূসের শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান এই লেখিকা।
চিঠির শুরুতে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে কি না তা ভেবে দেখতে কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমি জানি, একবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হলে তা প্রত্যাহার করা যায় না। কিন্তু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কি না, তা অনুগ্রহ করে ভেবে দেখুন।”
কারণ হিসাবে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা, কর ফাঁকি, অনুদানের অর্থে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেছেন তসলিমা।
“আপনারা বাংলাদেশি নাগরিক মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। কিন্তু তিনি কখনও শান্তির জন্য কোনও কার্যকর ভূমিকা পালন করেননি। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান হিসেবে তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন, ব্যাংকের নামে পাওয়া আন্তর্জাতিক অনুদান ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ক্ষুদ্রঋণ নেওয়া নারীরা সুদসহ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে।
“বর্তমানে তিনি জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করেছেন। গত নয় মাস ধরে তার নির্দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং বহু মানুষকে মিথ্যা অভিযোগে বন্দী করা হয়েছে।”
বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা মুছে ফেলতে মুহাম্মদ ইউনূস সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
“১৯৭১ সালে পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের হয়ে কাজ করছেন তিনি- এমনই অভিযোগ ওঠেছে। এখন তিনি প্রতিবেশী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার বয়স ৮৪, অথচ তার এই উন্মাদনায় বাংলাদেশের লাখো মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে পড়ছে। জিহাদি হামলার কারণে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, দেশের অর্থনীতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে। তবু তিনি নির্বিকার, নির্বাচনেও রাজি নন। তার সহযোগীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটে মেতে উঠেছে।”
বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউনূস নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও তসলিমা নাসরিনের অভিযোগ।
তিনি আরও লিখেছেন, “তার মনুষ্যত্বহীন, প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ- নৃশংস ও বর্বর। তিনি বিরোধী কণ্ঠস্বর নির্মূল করতে চান। তার শান্তির প্রতি কোনও শ্রদ্ধা বা আকাঙ্ক্ষা নেই। গত নয় মাসে একদিনের জন্যও বাংলাদেশে শান্তি ছিল না।”
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে তসলিমা নাসরিনের প্রশ্ন: “আর এমন একজন ব্যক্তিকে আপনারা নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছেন?”
এ অবস্থায় মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহার করে শান্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে দাবি জানান তিনি।
চিঠির শেষাংশে তসলিমা নাসরিন নব্বইয়ের দশকে নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখার স্মৃতি রোমন্থন করেন।
তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ‘সাখারভ পুরস্কার ফর ফ্রিডম অফ থট’ (Sakharov Prize for Freedom of Thought) লাভ করেন।
১৯৮৮ সালে এই পুরস্কার প্রদান শুরু করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। মূলত মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯৯৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে তসলিমা নাসরিনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, যে পুরস্কার পেয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলাসহ আন্তর্জাতিক মণ্ডলে পরিচিত ব্যক্তিরা।