সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীর, ২৬ পর্যটকের প্রাণহানি

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় যৌথবাহিনী।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় যৌথবাহিনী।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটক অধ্যুষিত পহেলগামে ২৬ পর্যটক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ওই হামলার পর আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সামরিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে, কারণ ওই এলাকায় কেবল পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়েই যাতায়াত সম্ভব।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, হামলার দায় স্বীকার করে সোশাল মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়েছে ‘কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে এর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

হামলার খবরের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জরুরি নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

পহেলগামের বৈসরান উপত্যকায়, পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত তৃণভূমিতে গুলির শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা ঘন বন থেকে বেরিয়ে এসে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। বেশ কয়েকজনের নিস্তেজ দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, সাহায্যের আবেদন করছেন বহু নারী।

এই হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই দিনের সৌদি আরব সফরে রয়েছেন এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফরে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকার লড়াই শুধু জারি রাখবে না, বরং এই লড়াই আরও জোড়ালো হবে। সন্ত্রাসীদের ঘৃণ্য এজেন্ডা কখনও সফল হবে না।”

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সও পৃথক পোস্টে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হতাহতের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমরা এই দেশ এবং এর জনগণের সৌন্দর্যে অভিভূত। এই ভয়াবহ হামলায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি, সেই সঙ্গে আমাদের প্রার্থনা তাদের সঙ্গে রয়েছে।”

এদিকে, হামলার পরপরই অমিত শাহ দিল্লিতে তার বাড়িতে একটি বৈঠক ডাকেন, যেখানে গোয়েন্দা ব্যুরো প্রধান তপন ডেকা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সিআরপিএফ প্রধান জ্ঞানেন্দ্র প্রতাপ সিং, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশের মহাপরিচালক নলিন প্রভাত এবং কিছু সেনা কর্মকর্তাও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন।

অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং গভর্নর মনোজ সিনহার সাথেও কথা বলেছেন বলে এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে অমিত সিনহা বলেন, “পহেলগামে এই ন্যাক্কারজনক হামলার জন্য অপরাধীদের উচ্চ মূল্য দিতে হবে।”

পহেলগাম মূলত বন, স্ফটিক-স্বচ্ছ হ্রদ এবং বিস্তৃত তৃণভূমির জন্য বেশ পরিচিত। প্রতি গ্রীষ্মে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন।

পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার পর অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনা বাহিনী। ছবি: ফাইল ফটো।

নিহতদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের দুইজন এবং কর্ণাটকের একজন পর্যটক রয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। কর্ণাটকের শিবমোগা জেলার একজন আবাসন ব্যবসায়ীকে তার স্ত্রী ও ছেলের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে জরুরি বৈঠক করেছেন।

এই হামলাকে ‘ঘৃণ্য ঘটনা‘ হিসাবে উল্লেখ করে ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, তিনি অবিশ্বাস্যভাবে হতবাক। “এই হামলার নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।”

জম্মু–কাশ্মীরে বেশ কয়েক বছর ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের আক্রমণ করেনি। এর আগে বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও সশস্ত্র গোষ্ঠীদের আক্রমণে ভ্রাম্যমাণ শ্রমিকদের কেউ কেউ নিহত হয়েছিলেন।

গত বছরের মে মাসে অবশ্য এই পহেলগামেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণে আহত হয়েছিলেন দুজন পর্যটক। কিন্তু সরকার এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে অভিহিত করেছিল সেসময়।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর মনে করা হচ্ছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্ভবত তাদের কৌশল বদল করেছে। এ ঘটনার পর জম্মু–কাশ্মীরে পর্যটন ব্যবসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

বেছে বেছে বিদেশি ও হিন্দুদের গুলি করে সন্ত্রাসীরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads