বৈদ্যুতিক গাড়ি ও পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার মুনাফা ও আয় কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে নিজের ভূমিকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে টেসলার মুনাফা ও আয় উল্লেখযোগ্যমাত্রায় কমেছে। ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠায় টেসলার বিক্রি কমে যায় এবং সমালোচনার মুখে পড়ে।
২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) গাড়ি বিক্রি থেকে টেসলার আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে এবং একই সময়ে মুনাফা কমেছে ৭০ শতাংশের বেশি।
কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেছে, এই মন্দা অব্যাহত থাকতে পারে। তারা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, ‘রাজনৈতিক মনোভাবের পরিবর্তন’ চাহিদাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকার কারণে কোম্পানিটির ভাগ্য সাম্প্রতিক সময়ে নিম্নমুখী হয়েছে। মাস্ক স্বীকার করেছেন, এর ফলে কোম্পানির প্রতি তার মনোযোগ কমেছে।
ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের প্রচারে মাস্ক ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দেন। ফেডারেল ব্যয় কমানো এবং সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডজ) উদ্যোগের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি।

ইলন মাস্ক বলেছেন, আগামী মাস থেকে ‘ডজে তার সময় দেওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে’। তিনি বলেন, “যতদিন প্রেসিডেন্ট চান এবং যতক্ষণ এটা কার্যকর মনে হয়”, ততক্ষণ তিনি সপ্তাহে মাত্র এক থেকে দুই দিন সরকারি কাজে ব্যয় করবেন।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে বিশ্বজুড়ে টেসলা বিক্ষোভ ও বয়কটের মুখে পড়েছে।
অবশ্য ইলন মাস্ক ‘ডজ’-এ সময় কমিয়ে দেওয়ার কথা জানালেও ‘ডজ’-এর কাজকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, “সরকারি ব্যবস্থা গুছিয়ে আনা প্রায় শেষ।”
নতুন তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রথম ত্রৈমাসিকে সার্বিকভাবে টেসলার মোট আয় ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম। বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার করবে।
ট্রাম্পের চীন-বিরোধী শুল্ক টেসলার ওপরেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। যদিও টেসলা তার হোম মার্কেটে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে গাড়িগুলো বিক্রি করে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসেমব্লিং করা হলেও এর অনেক যন্ত্রাংশ চীনে তৈরি।
কোম্পানিটির মতে, ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল বাণিজ্য নীতি’ তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে। টেসলার ত্রৈমাসিক আপডেটে বলা হয়েছে, “এই গতিশীলতা, রাজনৈতিক মনোভাবের পরিবর্তনের সাথে, স্বল্পমেয়াদে আমাদের পণ্যের চাহিদার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।”