আজ শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিত হবে ঈদুল আজহা। মুসলমানদের দ্বিতীয় এই বড় উৎসব বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হবে একদিন পর, অর্থ্যাৎ শনিবার।
অবশ্য সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবারও বাংলাদেশের শতাধিক গ্রামের মানুষ উদযাপন করবে কোরবানির ঈদ।
পবিত্র কোরআনের বর্ণনানুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। তবে আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়।
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, এই পশু কোরবানি সম্পূর্ণ রূপক। আল্লাহর পথে ত্যাগই ঈদুল আজহার প্রধান শিক্ষা।
প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। তবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পবিত্র এই মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসাবে আগামী রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের জীবনে বছরে দুটি খুশির দিনের একটি এই ঈদুল আজহা। সকালে নতুন কাপড় পরে সুগন্ধি মেখে মসজিদ কিংবা ঈদগাহে এক কাতারে দাঁড়াবেন ধনী–নির্ধন সবাই।
নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় হবে পশু কোরবানি। বাংলাদেশে সাধারণত গরু বা ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে দুম্বা, ভেড়া ও উট কোরবানি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। আমাদের এ অঞ্চলে শত বছর বা তারও আগে সাধারণত বকরি বা ছাগল কোরবানি দেওয়া হতো। এ জন্য এই ঈদ ‘বকরি ঈদ’ বা ‘বকরিদ’ নামেও প্রচলিত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এ অঞ্চলে গরু কোরবানি দেওয়া বাড়তে থাকে।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। বুধবার শেষ কর্মদিবসে কাজ সেরে শহুরে অনেক মানুষ নাড়ির টানে বাড়ির পথে রওয়ানা হন, অনেকে আবার বৃহস্পতিবার।
কোরবানির তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো।
এবছর পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে সংবাদপত্র প্রকাশ। তবে অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংবাদ সেবা দেওয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে সাত দিনের বিশেষ বিনোদন অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
এদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও একদিন আগেই চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ঈদের নামাজের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ঈদের প্রথম জামায়াত দরবার শরীফ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই জামায়াতে ইমামতি করবেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।
এরপর দ্বিতীয় জামায়াত সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা মাঠে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।
এছাড়া হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ ও মতলব উত্তর উপজেলায় সকাল সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরীফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন।
এছাড়া তার অনুসারী মুসল্লিরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করেন।
যেসব গ্রামে আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন হবে সেগুলো হচ্ছে- হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশত গ্রাম।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: