কোন চ্যালেঞ্জের মুখে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা?

প্রতীকী। ছবি: আহমেদ আকাচা
প্রতীকী। ছবি: আহমেদ আকাচা

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের পরপরই দামেস্কের রাস্তায় ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দ উদযাপনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে পুরো বিশ্ব।

তবে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসকের বিদায়ের এই আনন্দ বিজয়ী বিদ্রোহীদের সামনে আসা নতুন চ্যালেঞ্জকে ঢাকতে পারেনি।

আর হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বাশার সরকারের পতন ঘটানো বিদ্রোহীদের এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশটিকে একত্রিত করা, যেখানে কয়েক ডজন সশস্ত্র মিলিশিয়া দল এবং পতিত সরকারের সমর্থকরা রয়েছে।

কাজটি যে বিদ্রোহীদের জন্য দুরূহ হতে যাচ্ছে, সেটা রাজধানীর পতনের পর কয়েক ঘণ্টা ধরে বিশৃঙ্খলার ব্যাপকতা দেখেই অনুমেয়।

সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আল আরাবিয়া চ্যানেলকে বলেছেন, উৎসবের ফাঁক গুলিতে প্রাণ গেছে অন্তত ২৮ জনের। প্রেসিডেন্টের পলায়নের পর জনতা তার প্রাসাদে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ও ব্যাংকেও চলে লুটপাট।

চরম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়ে বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে ১৩ ঘণ্টার কারফিউ জারি করতে হয়েছে।

বিজয়ের এমন দিনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় ছিল বিদ্রোহীরা। কিন্তু নিজেদের অগ্রগতি এবং সহজ বিজয়ে তারা নিজেরাই হতবাক বলা চলে।

এখন তাদের মূল কাজই হবে সিরিয়ার ‘প্যান্ডোরার বাক্সটি’ আটকে রাখার পাশাপাশি ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করা এবং ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা শাসনের অবসানের পর দেশকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা।

সিরিয়ার পরবর্তী সরকার কেমন হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। আপাতত নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ আল বশির, যিনি ২০২৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।

দামেস্ক দখলের পর বিদ্রোহীরা বাশারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি ও তার মন্ত্রিসভাকে ক্রান্তিকালীন একটি দল দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নিতে বলেছিল।

কিন্তু স্কাই নিউ অ্যারাবিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জালালি দেশটির ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা নিয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তার সহকর্মীরাও অনিশ্চিয়তায় ভুগছিলেন।

বিদ্রোহীরা যে শূন্যতার মুখোমুখি হয়েছে, তাকে বাশার সরকারের ‘বিদায়ী উপহারও’ বলা যেতে পারে।

দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীরা যখন রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনও বাশার আল-আসাদ কোনো বিবৃতি দেননি।

জালালি বলেন, “পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার, জনগণ ও দেশকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে রেখে যাবেন, মনে হয় এটাই ছিল তার পরিকল্পনা। ‘আমি, না হয় বিশৃঙ্খলা’- সম্ভবত এমন বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন জনগণকে।”

জালালি দাবি করেছেন, বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কা জানাতে মস্কো পালানোর কয়েক ঘণ্টা আগেও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তখনও প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভাবলেশহীন।

“আমি তাকে বললাম, পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে, মানুষজন উপকূলের দিকে পালাচ্ছে এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরোধে ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি উত্তর দিলেন- ‘ঠিক আছে, আমরা বিষয়টা সকালে দেখব’। তার উত্তর ছিল বিস্ময়কর।”

আল কায়েদা থেকে রাষ্ট্রনায়ক

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ভবিষ্যৎ অনেকখানিই নির্ভর করছে এইটএস নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোটের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির (মূল নাম আহমাদ আল শারা) ওপর।

বাশারের বিদায়ের পরদিন সোমবার সকালেই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জালালির সঙ্গে তার বৈঠকও হয়।

এর আগে শনিবার দামেস্কে ফিরে আসেন জোলানি। দুই দশক আগে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আল কায়েদার হয়ে যুদ্ধ করতে দুই দশক আগে এই শহর ছাড়ায় এখানে বেড়ে ওঠেছেন জোলানি।

চার বছর তিনি সিরিয়ায় আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন আল-নুসরার নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু পরে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। এখন তার মুখেই শোনা যাচ্ছে পরিবর্তন আর সংযমের বার্তা।

গত সপ্তাহে সিএনএনকে তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বিরোধীদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জনগণের পছন্দ করা কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সরকার গঠন করা।

বিদ্রোহী জোটের মধ্যে সবচেয়ে সুসংগঠিত দলটিরই নেতৃত্ব দিয়েছেন জোলানি। এই দলটি গত চার বছর ধরে সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট নামের আধা-অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৪০ লাখ জনসংখ্যার ইদলিব শাসন করছে।

গত সপ্তাহে দখলে নেওয়া সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোসহ মূল শহরগুলোতে এরই মধ্যে নিজেদের রাজনীতিদকদের প্রশাসকের ভূমিকায় বসাতে শুরু করেছে বিদ্রোহীরা। দামেস্কের রাস্তাগুলোতে মোতায়েন করেছে নিজস্ব পুলিশ।

আরও পড়ুন