থাইরয়েড সেরে যাবে এক–দু’মাসে!

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

থাইরয়েডের গ্ল্যান্ডের সমস্যা এমন এক শারীরিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে শক্তিমাত্রা, মানসিক স্থিতি তো বটেই হার্টের স্বাস্থ্য, প্রেগন্যান্সিতেও সমস্যা ডেকে আনে। তাই থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা একবার এসে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে।

সোশাল মিডিয়ায় এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে দাবি করা হয়েছে, মাত্র এক থেকে দুই মাসে থাইরয়েডের সমস্যা পুরোপুরি সেরে যায়। তাও আবার ওষুধ ছাড়া! শুধু মেনে চলতে হয় সাধারণ কিছু অভ্যাস। ভিডিওতে বলা হয়- কোষ্ঠকাঠিন্য সারিয়ে তোলা, ত্রিফলা খাওয়া, ডিআইপি ডায়েট অনুসরণ করা এবং দিনে ১০-১২ বার ভুজঙ্গাসন করলেই থাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

তবে এ ধরনের দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতে স্পষ্ট।

তারা বলছেন, নিয়মিত পেট সাফ হওয়া অবশ্যই সুস্থ থাকার জন্য জরুরি। তবে শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেই সব রোগ হয়, এই দাবি মানবদেহের জটিলতা এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ধারণাগুলিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। জিনগত কারণ, সংক্রমণ, অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া, পরিবেশগত প্রভাব ও জীবনযাত্রা- এমন বহু বিষয়ের ভূমিকা থাকতে পারে।

তাছাড়া ত্রিফলা আয়ুর্বেদে হজমশক্তি ও অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু থাইরয়েডের মতো জটিল হরমোনজনিত রোগে ত্রিফলার কার্যকারিতা নিয়ে কোনও বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

ডিআইপি ডায়েট মূলত ফলমূল ও কাঁচা শাকসবজি খাওয়ার উপর জোর দেয়। তবে শুধু কোনও ডায়েট থাইরয়েড সারাতে পারে, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ ছাড়া ডায়েটে মারাত্মক কোনও পরিবর্তন আনলে শরীরে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

পুষ্টিবিদের মতে, থাইরয়েডের রোগীদের ক্ষেত্রে গ্লুটেন, চিনি, ও দুগ্ধজাত খাবার বাদ দেওয়া অনেক সময় কাজে দেয়, বিশেষ করে হাশিমোটোর মতো অটোইমিউন রোগে। তবুও শুধুমাত্র ডায়েটই যথেষ্ট নয়, ওষুধ ছাড়া এই রোগ সামলানো বিপজ্জনক।

ভুজঙ্গাসন যোগাসনের মাধ্যমে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি যোগাসন পরিপূরক হতে পারে, বিকল্প নয়।

ডা. বর্ষা কাচরু (এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, যথার্থ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল, নয়ডা) বলেন, “পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত ঘুম- এগুলো থাইরয়েডের নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কিন্তু হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাশিমোটোর মতো নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এই উপায়ে মাত্র কয়েক মাসে হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রায় ফেরা সম্ভব নয়। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।”

আরও পড়ুন