ক্রিসমাস বিশ্বের বিভিন্ন কোণে বিভিন্ন উপায়ে উদযাপিত হয়। রন্ধনপ্রণালীতেও থাকে বৈচিত্র্যময় খাবারের সমারোহ। স্টার্টার ব্রেড এবং স্যুপ থেকে শুরু করে ডেজার্টের আয়োজনে সাজানো থাকে ক্রিসমাস ডিসে, যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সীদের কাছেই লোভনীয়।
পৃথিবীর সাতটি দেশের ঐতিহ্যবাহী বড়দিনের খাবারের আয়োজন নিয়ে আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদন।
ফ্রান্স
ফরাসি শহর নিসের বিখ্যাত পেস্ট্রি শেফ ফোঁসা পাইয়ার মতে, ফ্রান্সে বড়দিনের প্রধান উৎসব শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর রাতে। রাত ৮টার দিকে জমকালো ডিনার শুরু হয়। প্রথমে পরিবেশন করা হয় সামুদ্রিক খাবার, যেখানে সাধারণত লবস্টার থাকে। এটি সরিষা, ডিমের কুসুম এবং ব্র্যান্ডি দিয়ে রান্না করা হয়। ছোট আকারের চিংড়ির পদও কখনো কখনো থাকে খাবারের তালিকায়।
এরপর পরিবেশন করা হয় মোরগ দিয়ে তৈরি একটি ভারী পদ। এর সঙ্গে থাকে আলুভর্তা এবং মাখনে ভাজা বাদাম। ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশন করা হয় ইউল লগ বা বুচ দু নোয়েল নামের ফরাসি ক্রিসমাস কেক। বড়দিনের দিনে ডিম, স্যামন এবং টোস্টও থাকে খাবারের তালিকায়।
ইতালি
মান্দারিন ওরিয়েন্টাল মিলানের মহাব্যবস্থাপক লুকা ফিনার্দি জানান, ইতালীয়রা বড়দিনে মধ্যরাতের জমায়েতে অংশ নেয় এবং গির্জায় যাওয়ার আগে বিশেষ খাবার উপভোগ করে।
শুরুতে থাকে স্মোকড স্যামন এবং মাখনের সঙ্গে শক্ত পাউরুটি। উপকূলীয় অঞ্চলে সবজি ও সামুদ্রিক লবণ দিয়ে মাছের পদ পরিবেশন করা হয়। এরপর থাকে মুরগির স্যুপ এবং পামেসান পনিরে চুবানো পাস্তা।
প্রধান খাবারে উত্তর ইতালীয়রা স্টাফড টার্কি খায়। সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দারা ঝলসানো মাছ, ভাজা আলু এবং শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন।
ইংল্যান্ড
লন্ডনভিত্তিক ট্রাভেল কোম্পানি নোটওয়ার্থির মালিক নিকোলা বাটলারের মতে, ইংল্যান্ডে বড়দিনের মূল উৎসব শুরু হয় ২৫ ডিসেম্বর সকালে। এক গ্লাস শ্যাম্পেন এবং স্মোকড স্যামন থাকে সকালের নাশতার আয়োজনে।
রাতের খাবারে পরিবেশন করা হয় টার্কি বা রোস্ট গরুর মাংস, যার সঙ্গে থাকে গাজর, মাখনে ভাজা মটর এবং ইয়র্কশায়ার পুডিং। ডেজার্ট হিসেবে থাকে ক্রিসমাস পুডিং, যা শুকনো ফল, মসলা ও ব্র্যান্ডি দিয়ে তৈরি।
গ্রিস
গ্রিসে বড়দিনের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। শেফ মারিয়া লোয়ের মতে, পরিবারের সবাই ফায়ারপ্লেসের চারপাশে বসে গমের বিশেষ রুটি খেয়ে উৎসবের শুরু করেন।
বড়দিনের সকালে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পর খাওয়ার উৎসব হয়। প্রথমে থাকে আখরোট ও মধু দিয়ে তৈরি কুকিজ। এরপর মুরগির স্যুপ এবং বাদামে ভরা মুরগির রোস্ট পরিবেশন করা হয়। ডেজার্ট হিসেবে মধু ও আখরোটের সঙ্গে বেক করা আপেল কিংবা দই খাওয়া হয়। পানীয় হিসেবে রেড ওয়াইন জনপ্রিয় দেশটিতে।
মেক্সিকো
পারাদেরো হোটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা পাবলো কারমোনা এবং জোশ ক্রেমারের মতে, মেক্সিকোর বড়দিনের মূল আয়োজন হয় ২৪ ডিসেম্বর। পিনাটা বা বাক্স ভাঙা দিয়ে উৎসব শুরু হয়, যা বিভিন্ন ক্যান্ডি দিয়ে ভর্তি থাকে।
রাতের খাবারে ধনেপাতা, মরিচ, পনিরসহ মসলা মেশানো গরুর স্ট্যু থাকে। ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশন করা হয় ক্রিম কেক ও স্ট্রবেরি। ২৫ ডিসেম্বর অনেকেই আগের দিনের খাবার গরম করে খান।
কোস্টারিকা
কোস্টারিকার উত্তরাঞ্চলীয় উচ্চভূমির নয়ারা হোটেলের মালিক লিও গাইটেস বলেন, মধ্যরাতের জমায়েতে অংশ নেওয়ার পর কোস্টারিকানরা বড় ধরনের ভোজের আয়োজন করে।
খাবারের তালিকায় থাকে তামেল, যা মুরগি বা সবজি ও পনির দিয়ে তৈরি। এ ছাড়া অ্যারোজ কন পলো (মটরশুঁটি, গাজর, ধনেপাতা এবং আস্ত মুরগি দিয়ে তৈরি চালের পদ) পরিবেশন করা হয়।
ডেজার্টে থাকে নারিকেলের পিঠা কিংবা দুধ, চিনি ও দারুচিনি দিয়ে তৈরি চালের পুডিং।
বাহামা
‘রোজউড বাহা মার’ রিসোর্টের পরিচালক ভনিয়া ইফিল জানান, বাহামায় বড়দিন উদযাপিত হয় নানা খাবারের মাধ্যমে।
মেনুতে থাকে টার্কি, ম্যাকারনি, পনির, নারিকেলের দুধ সহযোগে ভাত এবং আলুর সালাদ। সামুদ্রিক খাবারের সঙ্গে থাকে আলুর রুটি বা জনি কেক।