মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেখানে ভারতের নানা বিষয়ের সঙ্গে উঠে আসতে পারে বাংলাদেমের প্রসঙ্গও।
ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রগুলো এমন আভাস দিয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীদের।
দুই মার্কিন কর্তার সঙ্গে জয়শঙ্করের আলোচনায় ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকের বিষয়ে কথা হয়। ঠিক হয়েছে, প্যারিসের সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার বৈঠক হবে।
আগামী ১১-১২ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ট্রাম্প ও মোদী ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
এই বৈঠকের ব্যাপারে ওয়াশিংটনে প্রাথমিক আলোচনা সেরে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে সদ্য নিযুক্ত মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গেও বৈঠক করেন জয়শঙ্কর।
ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছি, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুর সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরবেন ট্রাম্পের কাছে।
মার্কিন নির্বাচন চলাকালে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এক্স হ্যান্ডলে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনার।
ধারণা করা হচ্ছে অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো বাইডেনের বাংলাদেশ নীতিতেও বড় পরিবর্তন আনবেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে সরিয়ে দিতে শুরু করেছেন বাইডেনের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কূটনীতিকদের।
কূটনৈতিক সুত্র বলছে, ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন ভারতের অন্যতম ‘অভ্যন্তরীণ ইস্যু’। ভারত চাইছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার জন্য বাংলাদেশে একটি অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগও যাতে ভোটে অংশ নিতে পারে, সেই সঙ্গে পড়শি দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হোক, সেরকমটি চাওয়া নয়াদিল্লির।
দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার উপর প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দমনপীড়ন করা হবে না, সেরকম নিশ্চয়তা চায় ভারত।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই ব্যাপারে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই কারণে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উত্থাপন করতে চান।
ট্রাম্প-মোদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহল।
জয়শঙ্করের কথায়, “প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের দৃশ্যমান, স্পষ্ট রসায়ন আছে এবং তা দু-দেশের সম্পর্কের ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রবাহমান।”
জঙ্গি তৎপরতা ও নাশকতার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের কারগার থেকে মুক্তি দেওয়া নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। এর পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির।
ইউনুস সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের নজিরবিহীন ঘনিষ্ঠতার পিছনে চীনের উসকানি রয়েছে বলে মনে করছেন দিল্লির কর্তারা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন চারদিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন। চীনেই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করছেন তিনি। আগামী মাসে বেইজিং যেতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। আগামী মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথা দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ঈশাক দার ঢাকা সফরে যাচ্ছেন। বহু বছর পর পাকিস্তানের কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন। পাকিস্তান-বাংলাদেশ সামরিক বোঝাপড়াও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
দ্য ওয়াল আরও লিখেছে, বাংলাদেশের চীন ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা আমেরিকার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তা তুলে ধরবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।