ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর, চীনা পণ্যে শুল্ক বেড়ে ১০৪%

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত পাল্টা শুল্ক বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি চীনা পণ্যে সম্প্রতি ঘোষিত ৩৪ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়েছে।

গত বুধবার হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশসহ ৬০ দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করার কথা জানিয়েছিলে ট্রাম্প, যা গত ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।

গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। পাশাপাশি ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার পণ্যের ওপর ৪৪ শতাংশ  শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প।

এ ছাড়া চীনা পণ্যের ওপর তিনি ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে বুধবার থেকে চীনের পণ্যে নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকেই দেশটির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক থাকায় সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে চীনকে এখন ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ, মাদাগাস্কারের পণ্যে ৪৭ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, জাপান ও মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন  ট্রাম্প।

এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ, ইসরায়েল ও ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ এবং চিলি, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট।

এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।

তিনি জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করায় দেশটির পণ্যে নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প মঙ্গলবারের মধ্যে চীনকে তার আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে জানান, অন্যথায় তাদের ওপর নতুন করে ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।

এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাস ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে ‘অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন’ বলে অভিহিত করে বলে, বেইজিং তাদের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।

এদিকে, এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বৃহত্তম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ আরও গভীর করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই শুল্ক চীনের উৎপাদকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে, যাদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক পণ্য এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, খেলনা, যানবাহন ও বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম। অন্যদিকে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে তৈলবীজ ও শস্য, উড়োজাহাজ, যন্ত্রপাতি ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন