‘স্বাধীন পর্যালোচনায় মন্ত্রী হিসেবে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি’- এমনটি উল্লেখ করেই পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে নিজেই তার এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এই ব্রিটিশ এমপি লন্ডনে ফ্ল্যাট নিয়ে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় ছিলেন।
পদত্যাগপত্রের একটি অনুলিপি তিনি এক্স হ্যান্ডলে জুড়ে দিয়ে লিখেছেন, “একটি স্বাধীন পর্যালোচনা নিশ্চিত করেছে যে আমি মন্ত্রী হিসেবে কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি এবং এমন কোনও প্রমাণ নেই যে আমি অনুপযুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করেছি।”
An independent review has confirmed that I have not breached the Ministerial Code and there is no evidence to suggest I have acted improperly.
— Tulip Siddiq (@TulipSiddiq) January 14, 2025
Nonetheless, to avoid distraction for the Government, I have resigned as City Minister.
Here is my full letter to the Prime Minister. pic.twitter.com/kZeWZfEsei
এদিকে টিউলিপকে লেখা স্টারমারের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সেখানে স্টারমার লিখেছেন, “আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি।”
আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর সেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন এমা রেনল্ডস।
টানা চতুর্থবার এমপি হয়ে লেবার পার্টির নতুন সরকারে স্থান পেয়েছিলেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ। তাকে করা হয়েছিল ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার; সহকারী মন্ত্রী হিসাবে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বও সামলান তিনি।
দেড় দশক বাংলাদেশ শাসনের পর খালা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর টিউলিপের নাম আসতে থাকে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঘটনায়।
ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয় তার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবেদন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের জন্ম ১৯৮২ সালে লন্ডনে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। ওই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন তিনি, কাউন্সিলরের দায়িত্বও পালন করেন।
কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া টিউলিপ লেবার পার্টিতে যোগ দিয়ে ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর টানা দুটি নির্বাচনে ওই আসনে লেবারদের পতাকা উড়িয়ে রাখেন তিনি।
গত বছরের জুলাইয়ের নির্বাচনে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। তারপরই সিটি মিনিস্টার করা হয়েছিল তাকে।
গত অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রে খবর আসে, লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া ভাড়া নিজের আয়ের খাতে দেখাননি টিউলিপ। সেই অভিযোগের তদন্তের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অন্যের মালিকানায় থাকা একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাসের অভিযোগও ওঠে।
এরপর টিউলিপের ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীরও লন্ডন বিনামূল্যে আরেকটি ফ্ল্যাট পাওয়ার খবর আসে ভিন্ন একটি পত্রিকায়।
টিউলিপ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন; এমনকি স্বাধীন পর্যালোচনায়ও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে পদত্যাগের চিঠিতেও উল্লেখ করেছেন।
সহকারী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সংসদ সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে কোনো বাধা নেই।