বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন টিউলিপ?

শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

টিউলিপ সিদ্দিক বারবারই বলে আসছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলাটি সাজানো। সেই মামলায় রায়ের পর এখন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলার কথা ভাবছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার ঢাকার আদালত প্লট দুর্নীতির এক মামলায় টিউলিপকে ২ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার পর এই খবর দিয়েছেন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম স্কাই নিউজের রাজনৈতিক প্রতিবেদক রব পাওয়েল।

বাংলাদেশে এই প্রথম বিদেশি কোনো এমপি আদালতে দোষি সাব্যস্ত হলেন।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্য। লেবার পার্টির এই নেতা মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। তবে বাংলাদেশ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাকে পদত্যাগ করতে হয়।

যাকে আদর্শ মেনে টিউলিপ রাজনীতিতে সক্রিয় হন, তার খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

এরপর বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাতে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও আসে।

ঢাকার পূর্বাচলে রাজউকের ছয়টি (প্রতিটি ১০ কাঠা) প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্লটগুলো নেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়ম্া ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে।

রেহানার আরেক মেয়ে টিউলিপ কোনো প্লট না নিলেও রেহানা, ববি ও রূপন্তীর বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি মামলার প্রতিটিতে তাকে আসামি করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, টিউলিপ তার ব্রিটিশ এমপি পদ ব্যবহার করে খালা শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে তার মা ও ভাই-বোনের নামে প্লট দিতে বাধ্য করেছিলেন।

দুদকের এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে সোমবার ঢাকার আদালত টিউলিপকে ২ বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। শেখ রেহানার সাজা হয়েছে সাত বছর কারাদণ্ড। এই মামলায় শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন, তার হয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড।

স্কাই নিউজের সাংবাদিক পাওয়েল বলেছেন, এই মামলা মোকাবেলা করতে যদিও টিউলিপ বাংলাদেশে যাচ্ছেন না, তবে ঢাকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে নানা সূত্রে খবর মিলেছে।

বাংলাদেশে রায়ের পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তার অনুপস্থিতিতে যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে বিচার সম্পন্ন হয়েছে, তা ‘ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক’। এ রায়কে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু তিনি দেখছেন না।

সাংবাদিক পাওয়েল লিখেছেন, বাংলাদেশ থেকে যখন প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে, তখন টিউলিপ প্রকাশ্যে কথা বলতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং আজকের সাক্ষাৎকারে তাকে বেশে আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে।

লেবার পার্টি এবং যুক্তরাজ্যের কিছু শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা এই বিচার নিয়ে আপত্তি তোলেন, তাও টিউলিপের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বলা হয় যে এটি ‘ব্যক্তিগত বিষয়’। কিন্তু যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন দলটি তাদের এমপির পাশে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করেছে যে টিউলিপ সিদ্দিককে বহিষ্কার করা হবে না এবং তারা বাংলাদদেশের বিচার প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করছে না।

এরপর টিউলিপও পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে এমপি পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ানোর কথা বিবেচনা করছেন না।

লন্ডনে জন্ম নেওয়া ৪৩ বছর বয়সী টিউলিপ ২০১৫ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের এমপি হন লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে। একই আসন থেকে ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও পুনঃনির্বাচিত হন তিনি। গত বছর আসন সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর তিনি এখন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি।

বাংলাদেশের রায় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না টিউলিপ। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েও তার আগ্রহ নেই। তিনি বলেছেন, তার মনোযোগ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন নিয়েই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন