কোরআন অনুবাদে লাগাম টেনে ধরতে তুরস্কে আইন

আল-কোরআনের খণ্ডিত অংশ। প্রতীকী ছবি।
আল-কোরআনের খণ্ডিত অংশ। প্রতীকী ছবি।

তুরস্কে ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় কোরআনের এমন অনুবাদ নিষিদ্ধকরণে নতুন একটি আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। এই আইনের অধীনে দিয়ানেত কর্তৃপক্ষ কোরআনের অনুবাদে লাগাম টেনে ধরতে পারবে।

কামাল আতাতুর্ক তুরস্কে ধর্ম বিষয়ক এই দিয়ানেত প্রতিষ্ঠা করেন। দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের কাছে এই কর্তৃপক্ষ সরাসরি প্রতিবেদন পেশ করে আসছে ২০১৮ সাল থেকে।

প্রতিষ্ঠানটিতে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছেন এবং এটি ১০০ টিরও বেশি দেশে ধর্মীয় সেবা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বাজেট প্রায় ৩০০ কোটি ইউরো, যা স্বরাষ্ট্রসহ অনেক মন্ত্রণালয়ের বাজেটের চেয়ে বেশি।

দিয়ানেত ৯০ হাজার মসজিদ পরিচালনা করে তুরস্কে৷ এছাড়াও কোরআন কোর্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হজের পাশাপাশি কোরবানির সমন্বয় করে।

২০১৮ সালের পর থেকে দিয়ানেত আগের চেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠছিল। সর্বশেষ ৪ জুন কার্যকর হওয়া ওই নতুন আইনে দিয়ানেতকে কোরআনের অনুবাদ ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা দেয়া হলো।

শুধু তাই নয়, এই আইনে কোনো অনুবাদ ‘ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না’- এমনটি প্রমাণিত হলে তা নিষিদ্ধও করতে পারবে দিয়ানেত। এছাড়া ভুল অনুবাদযুক্ত কোরআনের অনুলিপি, অডিও বা ভিডিও বাজেয়াপ্ত এবং ধ্বংস করতে পারবে তারা।

বিভিন্ন আমলে দেখা গেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানেরা তাদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেছেন।

ধর্মীয় উন্মুক্ততাকে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধেও।

এরদোয়ানের সমালোচকদের আশঙ্কা, তুরস্কের এই নতুন আইন ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে৷

ধর্মতত্ত্ববিদ সোনমেজ কুতলু এমন ঘটনায় রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করে বলেছেন, যে দেশে এক লাখের বেশি দিয়ানেত কর্মচারী এবং শতাধিক ধর্মতত্ত্ব অনুষদ রয়েছে, সেখানে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমেই কোরআনকে সমস্যাযুক্ত অনুবাদ থেকে রক্ষা করতে পারা উচিত ছিল।

এই আইনের ফলে “ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক” বলে অভিযুক্ত আয়াত সম্বলিত প্রকাশনাগুলো তদন্ত এবং বিচারের মুখোমুখি হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

দিয়ানেতের নতুন কর্তৃত্বকে ‘বিশ্বাসের মৌলিক লঙ্ঘন’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন আরেক ধর্মতত্ত্ববিদ ইহসান এলিয়াচিক।

তার মতে, ইসলামে কোনো প্রতিষ্ঠানকে মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে দাঁড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু ‘সত্যতা’ নির্ধারণে দিয়ানেতের কোরআন পর্যালোচনা ঠিক সে কাজটিই করে।

এলিয়াচিকের নিজের করা কোরআনের অনুবাদ এর আগে দিয়ানেত নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি সাংবিধানিক আদালতে আপিল করেছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন।

অবশ্য নতুন আইনে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া আর সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন