ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার সকালে ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল তিব্বত অঞ্চলে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। আর শুক্রবারের মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন নামে একটি স্থান।
জানুয়ারি মাসের প্রথম সাত দিনে দুবার ভূমিকম্প কোনো আশঙ্কাকে চিহ্নিত করে?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূমিকম্পের আঘাত উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ২০২৪ সাল থেকে রেকর্ড করা ৬০টি ভূমিকম্পের মধ্যে তিনটি ৪ দশমিক শূন্য মাত্রার উপরে এবং ৩১টি ৩ দশমিক শূন্য থেকে ৪ দশমিক শূন্যের মধ্যে ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা ব্যাপক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতির জরুরি প্রয়োজনের প্রতিই ইঙ্গিত দেয়।
সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাপক ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখোমুখি।
পৃথিবীর উপরিভাগে কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর জানান, টেকটোনিক প্লেটগুলো একে-অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর তখনো যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে।
তীব্র ভূমিকম্পের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। এসব এলাকা ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। যার প্রমাণ ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধস। এতে ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারায়।
ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ূন আখতার জানান, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে।
বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, ১৮৯৭ সালে ভারতের আসামে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অনুযায়ী, একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার ১০০ বছর পর ফের বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একশ’ বছর পূর্ণ হওয়ার ২০ বছর আগে হলে পূর্বের মাত্রার চাইতে কম মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়, আর ২০ বছর পরে হলে তার মাত্রা আগের চেয়ে বেশি হয়।