যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড থেকে বিতাড়িত এক যুবককে পুনরায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত, যাকে ভুলবশত গত মাসে এল সালভাদরের একটি কারাগারে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া নামে ওই যুবককে আগামী সোমবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট জজ পলা জিনিস।
গত মাসে কিলমার আব্রেগো গার্সিয়াকে শতাধিক অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যের সঙ্গে এল সালভাদরে নির্বাসিত করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) আদালতে দাখিল করা এক নথিতে স্বীকার করেছে যে, গার্সিয়ার নির্বাসন একটি ‘প্রশাসনিক ভুল’ ছিল। ২০১৯ সালে ইমিগ্রেশন আদালত তাকে নির্বাসন থেকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করেছিল।
গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার সময় হোয়াইট হাউস দাবি করেছিল, গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য। তবে গার্সিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
গার্সিয়া ছিলেন ২৩৮ জন ভেনিজুয়েলান ও ২৩ সালভাদরিয়ান নাগরিকের একজন, যাদের গ্যাং সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করে এল সালভাদরের কুখ্যাত ‘সেন্টার ফর দ্য কনফাইনমেন্ট অব টেররিজম’ কারাগারে পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে গার্সিয়ার আইনজীবী সাইমন স্যান্ডোভাল-মোশেনবার্গ বলছেন, তার মক্কেল কোনো দেশেই কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হননি এবং কোনো গ্যাংয়ের সদস্যও তিনি নন। তাকে নির্বাসিত করার ঘটনাকে ‘জোরপূর্বক বহিষ্কারের সমতুল্য ‘বলেও উল্লেখ করেছেন আইনজীবী সাইমন।
আইসিই কর্মকর্তারা বলেছেন, গার্সিয়ার নির্বাসন একটি ‘প্রশাসনিক ভুল ও অবহেলা’ ছিল। তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ দাবি করছে, আদালতের গার্সিয়াকে ফেরত আনার এখতিয়ার নেই, কারণ তিনি এখন এল সালভাদরের হেফাজতে।
বিচারক পলা জিনিস শুক্রবার তার রায়ে গার্সিয়ার নির্বাসনকে ‘অবৈধ কাজ’ বলে উল্লেখ করেন এবং তাকে সোমবারের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নির্বাসন নীতিতে অনড় রয়েছে এবং আদালতের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছে। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এক্স (টুইটার) পোস্টে বিচারক পলা জিনিসকে ‘মার্ক্সিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘তিনি এখন নিজেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট মনে করছেন।‘
গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার ভাস্কেজ সুরা, যিনি একজন মার্কিন নাগরিক, গত মার্চ মাসে তার স্বামীর নির্বাসনের পর থেকে তার মুক্তির দাবি করে আসছেন। সুরা সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
এই ঘটনায় ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। ম্যারিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর এক্সে লিখেছেন, ‘তারা ভুল স্বীকার করেছে এবং আমি তাদের তা সংশোধন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাসন নীতির সমালোচনাকারী ডেমোক্র্যাটরা ‘বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেছেন’।
এদিকে গার্সিয়ার আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেলকে ফিরিয়ে আনা যাবে না বলে যে দাবি ট্রাম্প প্রশাসন করছে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’। আদালতের সামনে সরকারের পক্ষে দাঁড়ানো বিচার বিভাগের আইনজীবী এরেজ রেউভেনি স্বীকার করেছেন, গার্সিয়ার নির্বাসনে সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, তিনি যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় হতাশ।
বিচারক পলা জিনিস গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার আদেশ দেওয়ার আগে আদালতে বিচার বিভাগের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাকে গ্রেপ্তারে কোনো ওয়ারেন্ট নেই, কোনো সম্ভাব্য কারণের বিবরণ নেই। তাহলে কোন নথির ভিত্তিতে তাকে নির্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। জবাবে আইনজীবী রেউভেনি বলেন, “আমার কাছে সেই আদেশ নেই, এটি রেকর্ডে নেই।”
এই ঘটনা আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতির জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।