ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমানো উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। তবে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ হলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কিছুই করার নেই’।
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের অনুষ্ঠান ‘দ্য স্টোরি উইথ মার্থা ম্যাককালাম’-এ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ভান্স বলেন, “আমরা চাই এই পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব প্রশমিত হোক। যদিও আমরা এই দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যা করতে পারি তা হলো এই দেশগুলোকে কিছুটা উত্তেজনা কমাতে উৎসাহিত করা। তবে আমরা এমন একটি যুদ্ধের মধ্যে জড়াব না যা মূলত আমাদের বিষয় নয় এবং যা নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা আমেরিকার নেই।”
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ভারত ওয়াশিংটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্যদিকে, ২০২১ সালে প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে ওয়াশিংটনের সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের গুরুত্ব কমে গেলেও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে রয়ে গেছে।
বিশ্লেষক এবং কিছু সাবেক কর্মকর্তার মতে, ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার এবং গাজায় ইসরায়েলের কূটনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত থাকায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও ওয়াশিংটন এই দুই দেশকে নিজেদের মতো করে ছেড়ে দিতে পারে, অর্থাৎ এখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সরাসরি চাপ তেমন থাকবে না।
পাকিস্তান ও ভারত একে অপরকে ড্রোন হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং বৃহস্পতিবার বড় ধরনের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনে ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রতিশোধ নেওয়া ‘নিশ্চিত’। দুই দিনের সংঘর্ষে প্রায় চার ডজন মানুষ নিহত হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই উত্তেজনার শুরু হয় গত ২২ এপ্রিল, যেদিন ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের অনুষ্ঠানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা হলো এটি যেন বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ বা, ঈশ্বর না করুন, পারমাণবিক সংঘাতে পরিণত না হয়।”
এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই বলে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স মন্তব্য করলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন উভয় দেশের সঙ্গেই নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং উত্তেজনা প্রশমনে তাদেরকে নিজেদের মধ্যে সরাসরি সংলাপের জন্য অনুরোধ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। গত বুধবার তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘পাল্টা-পাল্টি হামলা’র পর দুই দেশ ‘এখন থামবে’।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও উভয় দেশকে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।